‘পরীক্ষা না নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য’

রাশেদা কে চৌধূরী

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে হবে, এ নিয়ে ব্যাপক উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা ছিল সবার মধ্যে। সরকার এ পরীক্ষা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দিল, তাতে এ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান হলো। ঘোষণাটা আসা দরকার ছিল। ভবিষ্যতে কবে করোনার সংক্রমণ কমবে, কবে পরীক্ষা নেওয়া যাবে, এটা একেবারে অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিত মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম পুরোদমে শুরুর জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি, অর্থাৎ ৫ শতাংশের নিচে করোনা শনাক্তের হার আমাদের দেশে এখনো হয়নি। কাজেই সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটাও একটি বিকল্প। আর কোনো বিকল্প এ মুহূর্তে ভাবা যেত কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়।

এখানে আসল বিবেচ্য হলো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এই শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত ছিল। কারণ, এপ্রিলেই পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। এসব শিক্ষার্থী একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পূর্ণ সময় পড়ালেখা করেছে। দুই বছর ধরে নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেস্টসহ নানা পরীক্ষা দিয়েছে। সেগুলোর মার্কসও যোগ করা যেত কি না, তা নিয়ে ভাবা যায়।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের গড় নিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। তবে এটা বলা বাহুল্য, এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হলেও উচ্চশিক্ষা নিতে গেলে তাদের ভর্তি পরীক্ষা দিতেই হবে। মেডিকেল, প্রকৌশল থেকে সাধারণ শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষা দিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে সেই পরীক্ষাগুলোকেই চূড়ান্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ মুহূর্তে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে ১৪ লাখ অভিভাবক, ২ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য—সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষকে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হতো।

এত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সরকার বিবেচনা করেছে। তদুপরি এ পরীক্ষায় অনেক নারী শিক্ষার্থীর পক্ষে পরীক্ষা গিয়ে কেন্দ্রে অংশ নেওয়া কঠিন হতো। কারণ, তাদের অনেককেই গণপরিবহন ব্যবহার করে দূরদূরান্ত থেকে আসতে হতো। তাই সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা প্রয়োজন।

আমি শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, পরীক্ষাই জীবনের সবকিছু নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে সব পরীক্ষা বর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের তেমন কিছু ক্ষতি হয়নি। তাই ‘ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে’, এমন দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

বিশ্বব্যাপী এ বিপর্যয়ের মধ্যে নতুন স্বাভাবিকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা থাকতে হবে। যেহেতু এইচএসসির শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, সেহেতু তাদের এখন চাহিদা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়াটা দরকার। এ মুহূর্তে সেটাই হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

রাশেদা কে চৌধূরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা