প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢাবির প্রিন্টিং বিভাগ

অপরাজেয় বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়প্রথম আলো ফাইল ছবি

গত ২০ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেবর বিশাল, গুণমানে নিচে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের উদ্যোগে অন্য আরও একটি বিভাগের সঙ্গে প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ খোলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হলো বাংলাদেশের প্রকাশনা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের পাবলিশিং ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো আয়োজক ও সমন্বয়কারী হিসেবে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত এই পেশায় নিয়োজিত প্রকাশনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলাম ২০০৭ সালে। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি দীর্ঘকাল নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টির বাইরে ছিল। এ কারণে এ দেশে গড়ে ওঠেনি কোনো দক্ষ প্রকাশনা পেশাজীবী। আমাদের মতো ক্রম-অগ্রসরমাণ দেশে মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা আশু প্রয়োজন ছিল আরও আগে। ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যে সম্পাদনা ও প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পর এ বিষয়ে আমার চোখ খোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থার পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ২০০১ সালে প্রথম এ দেশে প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর দ্য অ্যাভেইলেবিলিটি অব সায়েন্টিফিক পাবলিকেশনের সহযোগিতায় প্রথম আন্তর্জাতিক মানের পাবলিশিং ওয়ার্কশপ ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় ‘স্ট্র্যাটেজিক জার্নাল পাবলিশিং ওয়ার্কশপ’। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থায় জার্নাল সম্পাদনা/প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক/গবেষকেরা অংশগ্রহণ করেন। ওয়ার্কশপের সমাপ্তির দিনে প্রধান অতিথি উপাচার্য এস এম এ ফায়েজকে অন্য দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলি। তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব এলে বিষয়টি দেখবেন।

এর কয়েক মাস পর আমি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে প্রকাশনাবিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করি। ভ্যাঙ্কুভারের সিমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির প্রকাশনা শিক্ষার অবস্থা দেখে তাদের প্রকাশনা শিক্ষার তথ্যাদি সংগ্রহ করে দেশে ফিরি এবং সেই আদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশনাবিষয়ক বিভাগ খোলার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রস্তুত করি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার প্রকাশনাবিষয়ক ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয় ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। তখন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তাঁর সঙ্গে এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এ বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়। ২০০৯ সালে এই বিভাগ খোলার প্রস্তাব উপাচার্যের কাছে উপস্থাপন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ২০১৫ সালের মে মাসে ‘প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ’ অনুমোদিত হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জুন মাসে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করি। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশনায় অভিজ্ঞতা আছে—গণযোগাযোগ বিভাগের এমন একজন শিক্ষক ড. সুধাংশু শেখর রায়কে চেয়ারম্যান নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও যত নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, তাতে বিষয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে, তেমন বিভাগ থেকে শিক্ষক নিয়োগ করে প্রথম দিকে বিভাগ চালু করা হয়েছে, পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জনবল তৈরি করে বিভাগ সমৃদ্ধ হয়েছে। আমিও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বিভাগে যোগদান করেছি এবং বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন কাজকর্ম এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। তেমনিভাবে নতুন বিভাগে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে, তেমন বিভাগ থেকে প্রাথমিকভাবে কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, যাঁরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশনা বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীসহ কয়েকজন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়ে বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়।

বিভাগ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য উল্লিখিত তথ্য জানানো হলো।

ড. বিমল গুহ: কবি ও প্রকাশনা বিশেষজ্ঞ