বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নেবে

আমেনা মহসিন

কোয়াডে যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে অবাক হয়েছি। সচরাচর কূটনীতিকেরা আরেকটু রাখঢাক করে কথা বলেন। আর চীনের কূটনীতিকদের সচরাচর এতটা খোলামেলাভাবে কথা বলতে দেখা যায় না। সব মিলিয়ে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছি। তাঁর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে কোয়াডকে চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। কারণ, এটিকে বেইজিং চীনবিরোধী একটি জোট মনে করে।

করোনাভাইরাসের মতো মহামারির এই সময়ে সারা বিশ্ব চরম এক সংকটে রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, মানবিক এই সংকটের কালে বৈশ্বিক নেতৃত্বের যেখানে একজোট হয়ে কাজ করার কথা, তার পরিবর্তে কোয়াড এবং বিআরআইয়ের নামে যে ভূরাজনীতি চলছে, তা আমাদের স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ভূরাজনৈতিক এই দ্বন্দ্বের একদিকে চীন আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। মহামারির এই সংকট মোকাবিলায় যখন সারা বিশ্বে কেউ নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসবে, সেখানে এই দ্বন্দ্ব আর উত্তেজনা মোটেই কাম্য হতে পারে না।

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয় নীতি মেনে চলেছে। বাংলাদেশ সব সময় বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার সমর্থক হিসেবে বৈশ্বিক নানা উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের আগ্রহ ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা। বাংলাদেশ সব সময় আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলো সামনে রেখে এগিয়েছে। তাই বাংলাদেশ কখনো কোনো সামরিক কিংবা প্রতিরক্ষা জোটে যোগ দেয়নি। এমন এক প্রেক্ষাপটে কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য আগবাড়িয়ে বলা মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে চীন যেন আগেভাগেই বলে একটা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো একটি সার্বভৌম দেশকে তো কেউ বলে দিতে পারে না বাংলাদেশ কী করবে আর কী করবে না। বাংলাদেশের স্বার্থ যেখানে থাকবে, সেখানেই যাবে। এই সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত তো অন্য কেউ চাপিয়ে দিতে পারে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ তো এমন কোনো অবস্থান কখনো নেয়নি যে সেটা চীন বা অন্য কোনো দেশের বিপক্ষে গেছে। বরং বাংলাদেশ সব সময় একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। কারণ, এ অঞ্চলের উন্নয়ন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই দেশকেই বাংলাদেশের প্রয়োজন। আর গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তাদেরও বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আমেনা মহসিন অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়