বিমানের প্রতিবাদ ও লেখকের বক্তব্য

গত ২৪ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনের মতামত বিভাগে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে। সেই লেখার প্রতিবাদ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগ একটি প্রতিবাদ পাঠিয়েছে।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের পাঠানো প্রতিবাদের মূল দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

বিমানের প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমাদের খাসলতের মূল্য ৮০০ কোটি টাকা?’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিমান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে লেখক ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর বিরুদ্ধে মানহানিকর, ভিত্তিহীন, অসত্য এবং ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী তথ্য উপস্থাপন করেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

আরও পড়ুন

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, লেখক তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত চার বছর বিমান লোকসানে থাকে, লোকসান শত কোটি থেকে হাজার কোটি পর্যায়ে। দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও রাষ্ট্রীয় পতাকা বহনের অজুহাতে ক্রমাগত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।’

প্রকৃতপক্ষে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত গত আট বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ছয় বছর লাভ করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে সরকার কর্তৃক কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে প্রতীয়মান যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এসব অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা-ও সত্য নয়। বলা হয়েছে, ‘বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সার্ভিস পরিচালনা করতে এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) সার্টিফিকেট নেই বিমানের। ২০১৮ সালে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হলেও এএনও সার্টিফিকেট ছাড়াই অপেশাদার গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান।’

প্রকৃতপক্ষে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকা এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এর কাজে নিয়োজিত আছে। পরবর্তী সময় করপোরেশন থেকে সরকারি মালিকানাধীন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হলে ২০০৯ সালে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা পরিচালনার অনুমোদন পায়।

এরপরে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-সংক্রান্ত এএনও-এর আলোকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এর জন্য আবেদনের আলোকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটিকে ইতিমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ফি পরিশোধ করেছে।

আরও পড়ুন

তা ছাড়া লেখক, বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চুরি দুর্নীতি নিয়ে ঢালাওভাবে যে মন্তব্য করেছেন, তা তথ্যভিত্তিক নয় এবং এতে বিমানের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মানহানি ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে, যাত্রীদের সেবা প্রদানের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হাজার হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

লেখাটিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং সর্বসাধারণের কাছে বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এ লেখার ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিমানের এই প্রতিবাদের ব্যাপারে লেখক ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তুলে ধরা হলো:

প্রকাশিত লেখাটি কোনো প্রতিবেদন নয়, বরং এটি মতামত কলাম। গত আট বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ছয় বছর লাভ করার বক্তব্যটি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের আলোকে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় না।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, বেবিচকের কাছে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৮৯৯ টাকা বকেয়া ফেলে রেখেছে বিমান। জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসির কাছে দেনা ২ হাজার ১০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। (৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, নিউজ বাংলা ২৪)। কোভিড-১৯ বেলআউট প্যাকেজের অর্থও ফেরত দেওয়া হয়নি।

সব মিলে, সামান্য কিছু বকেয়া পরিশোধ হলেও এক দশকে বাংলাদেশ বিমানের ভর্তুকির দায় এবং বকেয়া হাজার কোটি টাকার ওপরেই থেকে গেছে। গত ২৭ আগস্ট সময়ের আলো পত্রিকায় লাইসেন্স ছাড়াই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়, এখনো গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এএনও সার্টিফিকেট নেয়নি।

বিভাগীয় সম্পাদক