অনলাইনে গরু বিক্রি

সংকটের মধ্যেই থাকে সমাধানের সূত্র। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যেকোনো জমায়েতই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। গরুর হাট তো আরও বিপজ্জনক। কিন্তু তার বিকল্প বের করে ফেলেছেন অনেক উদ্যোক্তা। শহরের মতো এখন গ্রামেও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির গরু। বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যে খুব দক্ষ, অনলাইন গরুর হাট তারই আরেকটি নমুনা।

এ দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের আওয়াজ যতটা, করোনা মোকাবিলায় তার অনেক অসারতা দেখা গেছে। তবে সাধারণ মানুষ, খুদে উদ্যোক্তারা অতি দ্রুত নিজেদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনলাইন গরুর হাট তারই একটা সুন্দর নমুনা।

গরুর খামারিরা সামাজিক মাধ্যমে বিক্রয়যোগ্য গরুর ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তা দেখে ক্রেতারা অনলাইনেই পছন্দসই গরু খুঁজে নিচ্ছেন। দামে মিললে ক্রেতার কাছে ট্রাকে করে গরু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গতকালের প্রথম আলোয় পাবনা ও মৌলভীবাজার জেলার এ রকম কিছু অনলাইন গরুর বাজার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খামারমালিক ও ক্রেতা উভয়ই দেখা যাচ্ছে এই ব্যবস্থায় খুশি। করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাটে মানুষ যেতে ভয় পাচ্ছে আর বিক্রেতারাও হাটে গরু নিয়ে এসে ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই বিকল্প কার্যকর ব্যবস্থা হলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং বিক্রয়যোগ্য পণ্যের মোলাকাতের ব্যবস্থা করা। আধুনিক ব্যবসায়ীরা এই বিকল্পে অনেক সাফল্য পাচ্ছেন। সরকারও এই পদ্ধতি বিস্তারে সহায়তা করতে পারে।

জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা তথ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গরুর খামারি ও গেরস্ত বিক্রেতাদের জন্য অনলাইন গরুর হাটের আয়োজন করতে পারেন—পরামর্শ ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন।

করোনা সংক্রমণের ভয়ে এবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক শহরেই নিজস্ব ভবনের নিচে বা রাস্তায় কোরবানি দেওয়া বন্ধ রাখা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবাসনের সমিতি থেকে নিষেধ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকায়ও অনলাইনে শুধু গরু বিক্রি নয়, গরুর কোরবানি সম্পন্ন করে মাংস পৌঁছে দেওয়ার আয়োজনও দেখা যাচ্ছে। সীমিত আকারে হলেও দুর্যোগকালীন এসব ব্যবস্থার বিকল্প নেই। যেহেতু বিকল্প নেই, সেহেতু অনলাইনে গরু বিক্রি ও বিধি মেনে কোরবানি সম্পন্ন করার উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমাবে। এ ধরনের ব্যবস্থায় মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে যখন করোনা কেটে যাবে, তখনো তা অব্যাহত থাকবে এবং কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা দূর হবে।

অনলাইনে গরু বিক্রির এই আইডিয়া গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া, সরকারিভাবে উৎসাহিত করা এবং স্বাস্থ্যসচেতন বিক্রেতা ও ক্রেতাদের নিজেরাই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।