অপ্রতুল ব্যবস্থাপনার কারণে মৃত্যু বেড়েছে

নজরুল ইসলাম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখছি। সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের মৌলিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির ফল এখন পোহাতে হচ্ছে। অক্সিজেন সরবরাহে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার ঘাটতি আছে। সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় অনেক জেলায় আইসিইউ নেই। এসবের ফলে রোগীর মৃত্যু বাড়ছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবা আমরা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারিনি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু সংক্রমণ কমাতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মহামারি নিয়ন্ত্রণে কিছু ব্যাকরণসিদ্ধ পদ্ধতি আছে। সেগুলোর দিকে এখনো দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। যেমন প্রথম কাজ হলো পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের শনাক্ত করা এবং তাঁদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা) নিশ্চিত করা। আক্রান্ত ব্যক্তির পুরো পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা। ওই পরিবারের বাজার, ওষুধ কেনা বা প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় সহায়তা করতে হবে প্রতিবেশীদের। অর্থাৎ, ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক অংশগ্রহণ দরকার।

আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো নিজে বাড়ি থেকে বের হলেন না। কিন্তু তাঁদের বাসায় তো লোক আসছেন। তাই পরিবারের সবার কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। যদি রোগী বা তাঁর পরিবারের কেউ বেশি অসুস্থ হন, তবে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে পরীক্ষা করে পরিবারটির সব সদস্য ভাইরাসমুক্ত প্রমাণিত হলে তাঁদের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা। একে ভাইরাসবিদ্যার ভাষায় ‘মপ আপ’ বা মুছে ফেলা বলা হয়। অর্থাৎ, ভাইরাসের সমূলে বিনাশ নিশ্চিত করা। যাঁর বা যাঁদের উপসর্গ নেই, তাঁরাও ভাইরাস ছড়াতে পারেন। এই ছড়ানো রোধ করতে হলে শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। উপসর্গহীন আক্রান্ত একজন ব্যক্তি মাস্ক পরলে ৯৬ শতাংশ ভাইরাস স্ক্রিনিং করা যায়। আর সুস্থ ব্যক্তিও মাস্ক পরা থাকলে বাকি ৪ শতাংশ স্ক্রিনিং হয়। আর এভাবে সবাই মাস্ক পরলে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ সম্ভব। কিন্তু আমরা এখন এসব না করে রাস্তায় গাড়ি আটকে দেখছি। এভাবে মহামারি নির্মূল হবে না। রাস্তায় নয়, পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

এখন বেশি জরুরি দ্রুত সময়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। উপজেলা পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষা করতে দিলে সে নমুনা জেলা শহরে পাঠানো হয়। ফল পাওয়া যায় কয়েক দিন পর। তত দিন পর্যন্ত ওই ব্যক্তি জানতে পারছেন না তিনি সংক্রমিত হয়েছেন, নাকি হননি।

করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরন দেশে শনাক্ত হওয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়ে সীমান্তে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেটা পাসপোর্টধারীদের বেলায়, কিন্তু অনানুষ্ঠানিক যাতায়াতকারীদের বেলায় এই কড়াকড়ি নিশ্চিত করা যায়নি। এ জন্য দরকার ছিল কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো, তাঁদের উদ্বুদ্ধ করা। সেটি হয়নি, হলে আমরা অনেকটা বেঁচে যেতাম। পাসপোর্টধারীদের ঠেকানোর ফলে ডেলটার আসাটা কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামো ঠিকমতো কাজ করছে না। একে কাজ করাতে হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।