অ্যাম্বুলেন্স বিকল

অবহেলা যে বড় ধরনের অপরাধ, তা দেশের সরকারি হাসপাতাল, বিশেষত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বারবার প্রমাণ করে যাচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেশির ভাগেই যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত না করার অভিযোগ চিরায়ত। তার মধ্যেই কিছু মারাত্মক উদাসীনতা মাঝেমধ্যে সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার চরম দুর্বলতাকে সামনে তুলে ধরে। সেসব উদাসীনতা এক পরিসর থেকে অন্য পরিসরে সংক্রমিত হতে হতে তা এমনভাবে প্রতিষ্ঠা পায় যে একসময় জনমনে ধারণা হয়, এটি ব্যতিক্রম নয়, এটিই নিয়ম।

অনিয়মকে নিয়ম হিসেবে মেনে নেওয়ায় অভ্যস্ত জনমন সে কারণেই ‘জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স এক মাস ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে’—এমন খবরকে বিচলিত করার মতো ঘটনা হিসেবে দেখে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে পড়ে থাকার কারণে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার রোগীরা ও তাঁদের স্বজনেরা ভয়ানক বিপাকে পড়েছেন। মুমূর্ষু রোগীদের ঠিক সময়ে জেলা শহর কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে করোনা রোগীদের।

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় করোনা রোগীরা বিপাকে পড়ে গেছেন। কারণ, করোনার রোগীদের অন্য কোনো যানবাহনের চালকেরা বহন করতে চান না। শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাঁদের জেলা শহরে যেতে হচ্ছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারা দেশের সামগ্রিক চিত্রের একটি নমুনা মাত্র। সারা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান করলে সম্ভাব্য চিত্রটি যে খুব সন্তোষজনক হবে, তা আশা করা দুরূহ।

করোনা মহামারির এ কঠিন সংকটকালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি পরিষেবার দুরবস্থা মেনে নেওয়া কঠিন। একটি অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় থাকা রোগীকে জেলা হাসপাতালে ঠিক সময়ে যদি না নেওয়া যায়, তাহলে তার মৃত্যু হতে পারে। সেই মৃত্যুর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকেই কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

প্রশাসন যদি কর্মীদের দায়বদ্ধতা নিয়ে নীরব থাকে, তাহলে সেখানে অবহেলা ঘটবেই। এটি সামগ্রিক কর্মসংস্কৃতির অবনমন ঘটায়। যেগুলো হাসপাতালের মৌলিক কাজ, দৈনন্দিন কর্তব্য; সেগুলোর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রগণ্য। এ বিষয়টিই কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে।