ধানমন্ডি খেলার মাঠটি আবার সবার জন্য খুলে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। জনমতের কাছে নতিস্বীকার করে তারা সঠিক কাজটি করেছে। দুই বছর ধরে ছেলেমেয়েদের ওই মাঠে খেলতে দেওয়া হচ্ছিল না। সাম্প্রতিককালে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকাটি রীতিমতো বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হওয়ার পর এককালের অভিজাত ধানমন্ডি এলাকা এখন কংক্রিটের ভিড়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে চলেছে। তাও যা হোক ছিল একখণ্ড মাঠ। সেটিও ধানমন্ডি ক্লাব (পরে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) দখল করে নিয়েছিল। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হলো।
কর্তৃপক্ষ কেন এত দিন পর্যন্ত মাঠ দখলের অন্যায় কাজটি কার্যত অনুমোদন দিয়ে এসেছে? ওরা সীমানাপ্রাচীর দিয়ে মাঠটি ঘিরে ফেলে। মাঠে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে। উচ্চ আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে মাঠটি জবরদখল করে রাখার দুঃসাহস ক্লাব কর্তৃপক্ষ কোথায় পেয়েছিল, তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে। যদি কোনো মহল আইনবিরুদ্ধভাবে মাঠ কবজা করে রাখার পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মাঠে না নামলে হয়তো মাঠটি ফিরে পাওয়া যেত না। সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। ঢাকার মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় স্কুলের বিরাট মাঠটি স্বার্থান্বেষী মহল দোকানপাট তুলে দখল করে নিয়েছিল। অনেক আন্দোলন করেও তা উদ্ধার করা যায়নি। এখনো ঢাকার অনেক মাঠ বেদখল হয়ে আছে। ওগুলো পুনরুদ্ধার করা উচিত।
ধানমন্ডি খেলার মাঠটি আপাতত খুলে দেওয়াই যথেষ্ট নয়। এ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল পরিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রথম আলোসহ যেসব গণমাধ্যম ধানমন্ডি মাঠ খুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এটি ফৌজদারি অপরাধ। যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার যেন স্বার্থান্বেষী মহল কোনো ক্লাবের নামে ধানমন্ডি মাঠ দখল না নিতে পারে, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। মাঠের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করার জন্য স্বনামধন্য যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সাধারণের সম্পদ জবরদখলের দায়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। এ দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের।