করুণা, ক্ষমা, মুক্তি ও তাকওয়ার মাস

ধর্ম

‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো, ১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল ২. সালাত কায়েম করা ৩. জাকাত দেওয়া ৪. হজ করা ৫. রমাদান মাসে রোজা পালন করা।’ (বুখারি, হাদিস: ৭)। কোরআন করিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। কোরআন নাজিলের মাস রমাদান। ‘রমাদান মাস, এ মাসে মানুষের দিশারি, সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

রোজা শব্দটি ফারসি, উর্দু এবং হিন্দি ও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। আরবিতে একে সওম বলে, যার বহুবচন হলো সিয়াম। রোজা এবং সওম বা সিয়াম অর্থ বিরত থাকা। ইসলামি শরিয়ত ও ফিকহের পরিভাষায়, রোজা হলো সুবেহ সাদিক থেকে সন্ধ্যা বা সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে বিরত থাকা বা সংযম অবলম্বন করা। ‘আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণরেখা হতে প্রভাতের শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।

রমাদান মাসে একটি ফরজ হলো মাসব্যাপী রোজা পালন করা। রোজার সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি ওয়াজিব হলো সদকাতুল ফিতর প্রদান করা এবং ঈদের নামাজ আদায় করা। রমাদানের বিশেষ সুন্নত আমলগুলো হলো বিশ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, সাহ্‌রি খাওয়া, ইফতার করা ও করানো, কোরআন করিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা, ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।

করুণার সওগাত নিয়ে আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমাদান। কোরআন ও হাদিসে ‘রহমত’ শব্দের দুটি বিশেষণ রূপ ব্যবহৃত হয়েছে, তা হলো ‘রহমান’ ও ‘রহিম’। এই শব্দ দুটি বিসমিল্লাহর মধ্যে রয়েছে। উম্মুল কোরআন বা কোরআন জননী সুরা ফাতিহার দ্বিতীয় আয়াতে অনুরূপ রয়েছে। কোরআনের সঙ্গেও রহমতের সম্পর্ক সুনিবিড়।

রহমত আল্লাহ তাআলার বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য। রহমান অর্থ পরম করুণাময়। মহান আল্লাহর এ গুণটি সারা দুনিয়ার সব মানুষ মুসলিম অমুসলিম, বাধ্য অবাধ্য, সবার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। যিনি দয়া বা রহমত কারও প্রতি কোনো অবস্থায় এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ করেন না, তিনি রহমান। রহিম অর্থ অতীব মেহেরবান, অতিশয় দয়ালু। আল্লাহর এ দয়া শুধু মুমিন মুসলিমগণের জন্য খাছ বা বিশেষায়িত, যা আখিরাতে বিশেষভাবে প্রকাশিত হবে। যাঁরা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে মেনে ইসলামের অনুশাসন বা রীতিনীতি অনুসারে জীবন যাপন করেছেন, শুধু তাঁরাই মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে কবর, মিজান, পুলসিরাত ও হাশরে আল্লাহর ‘রহিম’ নামক দয়া বা অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবেন।

রমাদানের প্রথম দশক রহমতের। আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর গুণাবলি অর্জন করে সে গুণে গুণান্বিত হয়ে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সেই গুণের প্রকাশ ঘটাক।

খোদার দয়া-করুণা লাভ করতে পারলেই বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সংযমের মাস রমাদানে রহমত পাওয়ার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমী ও নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খল জীবন ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতা সব সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে ইনশা আল্লাহ!

আল্লাহর দয়া সর্বকালে সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে; পবিত্র রমাদান মাসে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, তিলাওয়াত, দান-সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আজকার যাবতীয় ইবাদত অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জন সহজ হয়।

খোদার দয়া-করুণা লাভ করতে পারলেই বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সংযমের মাস রমাদানে রহমত পাওয়ার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমী ও নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খল জীবন ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতা সব সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে ইনশা আল্লাহ!

l মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]