গৃহখেকো দুই ইউপি সদস্য

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে এত দিন আমরা গম ও চাল চুরির অভিযোগ শুনে এসেছি। ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের দায়ে করোনাকালে বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে জেলেও যেতে হয়েছে। কিন্তু ওই যে কথায় বলে, ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি’। জেল-জরিমানা-পদচ্যুতি যা-ই ঘটুক না কেন, একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি গরিবের হক মেরে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। হোক সেটি ত্রাণসামগ্রী কিংবা দুস্থ ব্যক্তিদের জন্য তৈরি ঘর।

শনিবার প্রথম আলোয় ‘দুস্থদের ঘর নিয়ে নয়ছয়’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে, তাতে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের দুই সদস্যের অপকীর্তি বেরিয়ে এসেছে। গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি সরকারের একটি ভালো কর্মসূচি। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও প্রায়ই বলেন, দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। থাকার কথাও নয়। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) বিশেষ কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কাঁকড়াবুনিয়া ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২টি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬টি ঘর নির্মাণ করে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করার দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যানের। তিনি কাজটি একা করেন না। ইউপি সদস্যরাও এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন। কিন্তু ঘর বরাদ্দ হওয়ার পর দেখা যায়, তাঁরা নিজেই সেখানে বাস করছেন।

দুস্থ ব্যক্তিদের নামে তৈরি ঘর কীভাবে ইউপির দুই সদস্য দখল করলেন, সেটি খুঁজে বের করা জরুরি। এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান একে অপরকে দায়ী করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি নাম পাঠালেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা। আর প্রকল্প কর্মকর্তার দাবি, ইউপি চেয়ারম্যানের তালিকার ভিত্তিতেই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসলে কেউ দায় এড়াতে পারেন না। সচ্ছল ব্যক্তি দুস্থদের জন্য তৈরি ঘর বরাদ্দ পেলে বুঝতে হবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। অদৃশ্য শক্তিই ভূমিকা রেখেছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাতে ভবিষ্যতে এসব দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা কমানো যাবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন স্বঘোষিত দুস্থদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে প্রকৃত দুস্থ ব্যক্তিদের কাছে ঘরগুলো বরাদ্দ করা।

পত্রিকায় মির্জাগঞ্জে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ ঘর নিয়ে নয়ছয়ের খবর ছাপা হয়েছে, তাতে মনে করার কারণ নেই যে তাঁরাই কেবল এই অপকর্ম করেছেন। দুস্থদের জন্য চাল-গম কিংবা ঘর নিয়ে যত অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, সবটাই তদন্ত করে দেখা হোক।