চিনিকল ও ‘হাতি বিত্তান্ত’

মাড়াইয়ের জন্য ফেলা হচ্ছে আখ। চিনিকল, কুষ্টিয়া, ৪ ফেব্রুয়ারি।ছবি: তৌহিদী হাসান


অনেক নীতিনির্ধারক এবং প্রতিবেদক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানাগুলোকে হাতির সঙ্গে তুলনা করছেন। সম্প্রতি চিনিকলগুলোকে একইভাবে হাতির সঙ্গে তুলনা করতে দেখে দু-চারটা কথা না লিখে পারা গেল না। তাঁদের মতে, হাতি পুষতে অনেক খরচ, কিন্তু সে অনুযায়ী কিছু ফেরত পাওয়া যায় না। তেমনি এই শিল্পকারখানাগুলো বছর বছর লোকসান করে বলে সরকার এগুলোর ভরণপোষণ করছে, অথচ এর বিনিময়ে নাকি তেমন কিছু পাওয়া যায় না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম একটি ইংরেজি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেই ফেলেছেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয় কিন্তু এর বিনিময়ে এক কানাকড়িও ফেরত দেয় না।’
প্রশ্ন হলো, এই যে সরকার ‘কত কিছু দিচ্ছে’ এর মানে কী? আর এই যে ‘কিছু পাওয়া যায় না’, এর অর্থই বা কী?

বাংলাদেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে, পাঁচ লাখ চাষি আখ চাষের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে আখ চাষকে কেন্দ্র করে। চিনিকল এলাকায় গেলে দেখা যাবে চিনিশিল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় গড়ে উঠেছে রাস্তাঘাট, ব্যাংক, হাটবাজার, অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র ছাড়াও বিদ্যুৎ অবকাঠামো, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। ঐতিহাসিকভাবে চিনিকলগুলো গড়ে উঠেছে এই আখচাষি ও মিলের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে। এ ছাড়া চিনির উপজাত (চিটাগুড়, ছোবড়া ও প্রেসমাড) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে আরও অনেক শিল্প ও কর্মসংস্থান। যেমন কাগজ, অ্যালকোহল, জৈব সার, স্যানিটাইজার ইত্যাদি। আখের ছোবড়া ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তা দিয়ে মাড়াই মৌসুমে চিনিকলগুলো অনায়াসে চলতে পারে। এই চিনিকলগুলো কর্মসংস্থান তৈরির বাইরেও প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি কর হিসেবে দিয়েছে। নতুন করে বিনিয়োগ করে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এগুলোর অর্থনৈতিক অবদান বহুগুণ বৃদ্ধি পেত।

কিন্তু আমরা দেখছি জনগণকে বোঝানো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাগুলো চালানো মানে ‘সরকার হাতি পুষছে’। কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, মিলগুলো বাজারমূল্যের কয়েক গুণ বেশি খরচে চিনি উৎপাদন করতে গিয়ে এত লোকসান দিচ্ছে, যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ রকম অবস্থায় এখন প্রশ্ন হচ্ছে:
হাতি পোষা বলতে সরকার কী বোঝাচ্ছে?
সরকার তো ভর্তুকি দিয়ে বেশি মূল্যে চিনি কিনে কম দামে বিক্রি করছে না। এমনকি আখচাষিদের সময়মতো মূল্য পরিশোধও করছে না। এর আগে বিভিন্ন সময়ে করপোরেশন সরকারের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিলেও সরকার এখন কোনো অর্থ দেয় না। তাই করপোরেশন বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। প্রতিবছর সুদ দিতে গিয়ে আর্থিক চাপে চিনির উৎপাদন খরচ উল্টো বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় কেন বলা হয় সরকার মিল পুষছে? বরং বলা উচিত ছিল ঠিকমতো কলকারখানা না চালিয়ে সরকার মিলগুলোকে ঋণগ্রস্ত করছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা ব্যাংকঋণের দায় রয়েছে করপোরেশনের ঘাড়ে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও গ্র্যাচুইটি, ভবিষ্য তহবিল, আখের মূল্য ও সরবরাহকারীর বিল বাবদ বকেয়া পড়েছে ৫৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেটা সরকার এখনো দেয়নি।

আকাশছোঁয়া উৎপাদন খরচের কারণ কী?
উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পেছনে কারণ অনেক। একটি মিলে মাড়াই মৌসুমে যত বেশি দিন আখমাড়াই করে চিনি উৎপাদন হবে, যত উন্নত মানের আখ ব্যবহার করে, যত সিস্টেম লস কমিয়ে যত বেশি আখ থেকে যত বেশি চিনি উৎপাদন করা যাবে, তত চিনির দাম কমবে। (সর্বজনকথা, ২০১৬) আবার বেশি আখ ব্যবহার করলে বেশি উপজাত তৈরি হবে। কিন্তু এর সবকিছুর জন্য প্রথমে প্রয়োজন কৃষককে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সময়মতো আখ সরবরাহ করলেও কৃষকেরা সময়মতো টাকা পাননি। এতে কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। আখ চাষে নিরুৎসাহ, পর্যাপ্ত আখের সরবরাহ না থাকা, আখের গুণগত মান কমে যাওয়া, মিলগুলো আধুনিকায়নে বিনিয়োগ না করা, আখ সংগ্রহ ও মাড়াইয়ের সময়ের সমন্বয়ের অভাবে সুক্রোজ কমে যাওয়া, চিনি আহরণ হার হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি নানা কারণ একত্র হয়ে চিনির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সমস্যা যখন বিনিয়োগের অভাব, ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, সমন্বয়ের ঘাটতি, তখন প্রশ্ন আসে এগুলোর দিকে আলোকপাত না করে, এগুলোর দায় কার সেদিকে নজর দিয়ে, কেন শুধু মিলের ওপর দোষ চাপানো? মিলকে কেন হাতি বলা?

কেরু মুনাফা করলে অন্যরা কেন মুনাফা করে না?
চিনিকলের বেশির ভাগ লোকসান করলেও কেরু মুনাফা করছে। ব্যাপারটা কী? কেরুর ডিস্টিলারি উপজাত ব্যবহার করে অ্যালকোহল, স্যানিটাইজার, হাসপাতালে ব্যবহার্য জীবাণুনাশক বানায়। কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে জৈব সারের কারখানাও আছে। তাহলে অন্য মিলগুলোতে কেন নেই? অন্য মিলগুলোতে কি সেই সম্ভাবনা নেই? উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। সে অনুযায়ী বিনিয়োগও করছে না। বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা উপজাত ব্যবহার করে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনের কথা বললেও এগুলো সরকারের প্রায়োরিটিতে নেই।

কম কাজ করে বেশি বেতনের মানে কী?
অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর গড় বার্ষিক আয় প্রায় ৫ লাখ ৫৮ হাজার কিন্তু এর বিনিময়ে তাঁদের মোট বার্ষিক অবদান ৮০৪ কোটি টাকা। প্রতিবেদনের অসম্পূর্ণ তথ্য অনুযায়ী একেকজন কর্মচারীর গড় অবদান ১৩ হাজার ১৭১। এই প্রতিবেদনে ছয়টি করপোরেশন-বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশন, বাংলাদেশ ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন এবং বাংলাদেশ স্টিল ও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের তথ্য ব্যবহার করে করা হয়েছে। ঢালাওভাবে বিভিন্ন ধরনের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে এ ধরনের হিসাবের ওপর অত্যধিক জোর দেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা এই রিপোর্টটিতে যদিও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অনিয়মকে এক লাইনে দায়ী করা হয়েছে, কিন্তু এসব কারণে সরকারের কত ব্যয় হয়ে যাচ্ছে, এমন কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি। পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে খরচ কত বেড়ে যায়, এ প্রশ্ন করা হয়নি। অথচ কলকারখানা যাঁরা সক্রিয় রাখেন, তাঁদের পেছনে কত খরচ হয়, তা মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিপোর্টের ভাষা পড়লে মনে হবে কর্মচারীরা চাকরি নিয়ে অলস বসে থাকেন ইচ্ছা করে। শুধু চিনিকলের কথাই যদি ধরি, চিনিকলগুলোতে কর্মচারীরা সারা বছর বেতন পান, কিন্তু মাড়াই মৌসুমে চুক্তিতে শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মৌসুমে যত বেশি দিন মাড়াই হবে, সারা বছরের লাভ তত বেশি হবে। এটিই চিনিকলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এখন আখ চাষে যথেষ্ট প্রণোদনা না দিয়ে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করে, বিনিয়োগ না করে যদি বলা হয় সারা বছর তাঁরা বসে থাকেন, তাহলে সেটা কার সমস্যা?

বেসরকারি চিনিকলের সঙ্গে তুলনা কেন সঠিক নয়?
যখনই রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানার লোকসানের কথা আসে, সঙ্গে বেসরকারি উৎপাদকদের মুনাফার তুলনা চলে আসে। অথচ এই তুলনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কেননা, বেসরকারি উৎপাদকেরা নিজেরা চিনি উৎপাদন করেন না, তাঁরা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে সেগুলোতে কেমিক্যাল প্রয়োগ করে রিফাইন করেন। দেশের মূল্য সংযোজন চিনিকলের মতো নয়। এগুলোকে মূলত রিফাইনারি বলে। এগুলো মিলের সমতুল্য নয়। এসব রিফাইনারির সঙ্গে আখ চাষ, কৃষক, উপজাত ব্যবহার করে শিল্পকারখানা, অবকাঠামো, হাটবাজার, গ্রামীণ জীবিকার কোনো সম্পর্ক নেই।

আসল হাতি কারা?
ভর্তুকি না দিয়েও যদি দাবি করা হয় হাতি পোষা হচ্ছে, তাহলে সরকারকে কে বলেছে এমন কাল্পনিক হাতি পুষতে? হাতি তো থাকার কথা বনের ভেতর। সরকার বন রক্ষা করবে, শিকারির কাছ থেকে হাতিকে নিরাপদে রাখবে। হাতি নিজের খাবার নিজেই জোগাড় করবে বনের মধ্যে বাস করে। বন রক্ষা না করলে হাতি লোকালয়ে খাবার খুঁজতে এসে কৃষকের ফসল খেয়ে ফেলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সরকার যদি বন রক্ষা করে, তাহলে হাতি বন ছেড়ে কী করতে এই মানুষের দেশে আসতে চাইবে, যেখানে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করেও মানুষ দাবি করবে হাতি পুষছে? জনস্বার্থে শিল্প, কৃষি ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখার অর্থ হাতি পোষা নয়। সময়মতো বিনিয়োগ করে, আধুনিকায়ন করে এগুলো টিকিয়ে রাখার অর্থ হচ্ছে বনকে টিকিয়ে রাখা। আর এর মধ্যে জীবিত সব প্রাণ তাদের নিজ প্রয়োজনে, জীবনের তাগিদে বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রাখবে, বংশ বিস্তার করবে এটাই কাম্য। কিন্তু এগুলো না করে সরকার পুষছে ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত খেলাপিদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। দেশের অবকাঠামো নির্মাণে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তাঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করছে, আর এর মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষের পকেট ভারী করছে। আসল হাতি তো তাঁরাই, যাঁরা হাতির সার্কাসের মতো উন্নয়নের সার্কাস দেখিয়ে দেশের মানুষকে ভুলিয়ে রাখছেন।

হাতির আসলে অবদান কী?
জীবদ্দশায় হাতিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক উপকার পেয়েছে, যেমন হাতিকে ব্যবহার করে এক জায়গার গাছের গুঁড়ি অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে, হাতির উপস্থিতি অনেক সময় বনের মানুষকে নিরাপত্তা দিয়েছে। হাতি এক জায়গার বীজ খেয়ে অন্য জায়গায় ত্যাগ করে বলে এক জায়গার গাছ অন্য জায়গায় বিস্তৃত হয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয়। এসব অবদানের বেশির ভাগ রয়ে গেছে মানুষের অগোচরে। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি কলকে হাতি বলতেই হয়, তাহলে প্রথমে স্বীকার করতে হবে এই কলকারখানাগুলো কীভাবে মানুষের কাজে আসছে, কীভাবে এগুলোকে আধুনিক করা যায়, আর উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
‘হাতি মরলেও লাখ টাকা’ এই প্রবাদটি মনে আছে? সে হিসাবে হাতির দাঁত হাতির জন্য একটা অভিশাপ। একশ্রেণির মানুষ মৃত হাতির মহামূল্যবান দাঁত খুলে বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জনের জন্য বসে থাকে। এই শ্রেণি কারা তা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারলেই বোঝা যাবে হাতির সঙ্গে এই সব তুলনার পেছনে কী স্বার্থ কাজ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের ১৫টি চিনিকল, ১টি ইঞ্জিনিয়ারিং, ১টি ডিস্টিলারি ও ১টি জৈব সার কারখানা আছে। করপোরেশনের অধীনে রয়েছে ৯ হাজার ৮৯ একর জমি। আর এই মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। শিকারিদের লোভের কারণে এই বিপুল সম্পদ হাতির দাঁতের মতোই রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাগুলোর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে নিবন্ধিত আখচাষিদের সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসছে মৌসুমে আখ উৎপাদন কমে যেতে পারে। সেটি হলে লোকসানের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের দায়িত্বহীনতাকে আমি ‘ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়নি’ বলব না, বলব ‘পরিকল্পিতভাবে আখচাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি’ যাতে লোকসানি খাত হিসেবে দেখিয়ে চিনিকলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া যায়। এতে তারা সফল হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন(বিএসএফআইসি) এরই মধ্যে সরকারি ছয় চিনিকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ধ করে দিলে এই সম্পদ যাদের লুটের বস্তু হবে, তাদের জন্য মিলগুলোকে হাতি পোষার সঙ্গে তুলনা করা সুবিধাজনক। বন্ধ হওয়ার পর সম্পদ লুটপাট থেকে লাভবান হওয়াই এর উদ্দেশ্য। সরকারের যেমন বন সংরক্ষণ করে হাতিকে বাঁচতে দেওয়া উচিত, তেমনি উচিত পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করে চিনিকলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা। লুটপাটের অর্থনীতি আড়াল করে পোষা হাতির সার্কাস দেখতে কেউ চায় না।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।