জিএসপি সুবিধা

সাভার ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু বিশ্বের শ্রমবাজারে এ দেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ভাবমূর্তি খারাপ হতে পারে, তা ছিল সহজেই অনুমেয়। আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি এতটাই গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছিল যে এই অগণিত শ্রমিকের মৃত্যু অনেকটাই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল বিশ্বনেতাদের মনে, যা হয়তো স্বাভাবিক। এরপর বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় এবং শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মজুরি বোর্ড গঠনে কমিটি করা হয়েছে। গত ২৭ জুন বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত দুইটার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবার অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অ্যাম্বাসেডর মাইকেল ফ্রোমেন জিএসপি স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এ ধরনের সিদ্ধান্তে হতাশ হতে হয় হতবাক না হলেও। বাংলাদেশ যেখানে শ্রমিকদের মানোন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল বাংলাদেশকে আরও কিছু সময় দেওয়া। জিএসপি সুবিধা স্থগিত করায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিকেরাই। এই স্থগিতাদেশের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ দেশের শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে, যা দুঃখজনক। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের লক্ষ্যে যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে, তা হলো সংশোধিত শ্রম আইন প্রয়োগ, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের উন্নতি এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করাসহ আরও কিছু কল্যাণমূলক পদক্ষেপ। অযথা হায়-হুতাশ না করে এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে শতভাগ মনোযোগ দিতে হবে।
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে ইউরোপ কিংবা কানাডাও যদি একই সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত দারুণ সংকটে পড়তে পারে। তাই জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ দেশের পোশাকশিল্প তথা শ্রমিকদের মানোন্নয়নের ব্যাপারে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা প্রয়োজন। আর সে জন্য শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নতি এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে আরও কিছু জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সঞ্জয় কুমার ভৌমিক
বসুন্ধরা আ/এ, শ্রীমঙ্গল।