জীবনের দাম ৬০ হাজার টাকা!

বাসের চাপায় মারা গেছেন ১২ জন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারপ্রতি ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়েছে একটি সমঝোতা বৈঠকে। মানে একটি জীবনের দাম ৬০ হাজার টাকা! সেটাও নাকি একতরফাভাবে হয়েছে, তাই ক্ষতিপূরণ না দিতে বাস ধর্মঘট ডেকেছে ‘বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এবং সেই ধর্মঘট পালিতও হয়েছে। এটা সত্যিই এক সব সম্ভবের দেশ।
১২ জুলাই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুরে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ১২ জন নিহত হন। এমন গুরুতর দুর্ঘটনার পর আইন নিজের মতোই চলার কথা ছিল। কিন্তু তা চলেনি। আইন প্রণয়ন যাঁর কাজ সেই স্থানীয় সাংসদ, এবং আইন বাস্তবায়ন যাঁদের কাজ সেই পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে সার্কিট হাউসে এক ‘সমঝোতা বৈঠকে’ প্রতিটি জীবনের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ৬০ হাজার টাকা দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপকের। ‘একতরফাভাবে’ এ ‘ক্ষতিপূরণ’ নির্ধারণের বিরুদ্ধে তাই দাঁড়িয়েছে তাঁদের সংগঠন।
সালিস-সমঝোতা একটি স্বীকৃত বিষয় কিন্তু যে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন মারা গেছেন সেটা কি ‘সমঝোতা বৈঠক’ করে নিষ্পত্তির ব্যাপার? মামলা, তদন্ত, বাসচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা—এসব কি দেশ থেকে উঠে গেছে? আর একটি জীবনের দাম ৬০ হাজার টাকা নির্ধারিত হলো কিসের ভিত্তিতে? সালিস-সমঝোতা অভিযুক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে তা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই ধারণা করি।
বাসচাপায় ১২ জন মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। মামলা ও আইনকে নিজের পথে চলতে দিতে হবে। ‘সমঝোতা বৈঠক’ করে এর নিষ্পত্তি হতে পারে না। হানিফ পরিবহনকে এর দায় নিতে হবে। কিন্তু উল্টো মালিক সমিতির নামে তারা তাদের ঔদ্ধত্য দেখাল। আইনগতভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি।