টিকাদান কর্মসূচি

গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার যে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছিল, মাঝপথে তা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল টিকার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তিন কোটি টিকা সরবরাহের। কিন্তু ভারতে টিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করেছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ। যদিও ১ কোটি ৫০ লাখ টিকার দাম আগাম পরিশোধ করা হয়েছিল। ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই সরকারকে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হয়।

সোমবার সেই স্থগিত হওয়া টিকাদান কর্মসূচি আবার শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকের অভিযোগ, নিবন্ধন করার পর নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা আসেনি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চীনের সিনোফার্ম থেকে পাওয়া টিকা দেওয়া হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে আর মডার্নার টিকা ১২টি বড় শহরে। এবার মফস্বলে টিকা প্রার্থীদের ভিড় বেশি। প্রথম দফায় কেবল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ফাইজার, সিনোফার্ম প্রভৃতি কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগস্টের প্রথম দিকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩৫ লাখ টিকা আসার কথা। এ ছাড়া রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি আনারও চেষ্টা চলছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগস্ট নাগাদ প্রায় দুই কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু কোন টিকা, কী পরিমাণ কবে আসবে, সে বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে। বিশেষ করে যে ১৫ লক্ষাধিক মানুষ অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তঁারা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। ইতিমধ্যে অনেকের প্রথম ডোজ দেওয়ার সময় দুই মাস পার হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়।

সর্বসাধারণের জন্য টিকা প্রদানের সর্বনিম্ন বয়স কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে, আগে ছিল ৪০ বছর। এ ছাড়া বয়সনির্বিশেষে স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মীরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, দুই ডোজ টিকা একই কোম্পানির হওয়া বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে যাঁরা প্রথম ডোজ নিয়ে বসে আছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দ্রুত দিতে হবে। কিন্তু কোভ্যাক্সের প্রতিশ্রুত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না আসা পর্যন্ত সেটি সম্ভব নয়।

যেকোনো কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। প্রথম দফায় টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার মোটামুটি সফল হয়েছিল। কিন্তু এবার শুরুতেই বিভিন্ন স্থান থেকে টিকা দেওয়া নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল থেকে ১২টি বড় শহরে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ টেলিফোন করে টিকা পাওয়ার সমস্যার কথা জানিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গেলে তঁাদের জানানো হয় এখনো টিকা আসেনি। কেন এ বিশৃঙ্খলা? সমস্যা থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এসএমএসের মাধ্যমে আগে থেকে সংশ্লিষ্টদের জানাতে পারতেন। দেশব্যাপী করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে টিকাপ্রার্থীদের এ হয়রানি বন্ধ হোক।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যত দ্রুত সম্ভব ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনতেই হবে।