দেশত্যাগী মানুষগুলো কোথায় যাবে?

আশ্রয়ের খোঁজে সন্তানসহ এক রোহিঙ্গা নারী
আশ্রয়ের খোঁজে সন্তানসহ এক রোহিঙ্গা নারী

সীমানার ওপার থেকে অনেক নারী, পুরুষ ও শিশুই বাংলাদেশে পার হয়ে আসতে চেষ্টা করেছে সাময়িক নিরাপত্তার খোঁজে; অন্তত মিয়ানমারে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজমানকালে। এমনও অনেকে আছে, যারা এই গমনের পথে তাদের কাছের মানুষকে হারিয়েছে; পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

কয়েক দশকব্যাপী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীটি প্রচণ্ড বৈষম্য ও দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। এমনও শোনা গেছে যে গর্ভবতী মায়েরা পালানোর সময় সমুদ্রপথে চলমান নৌকায় সন্তান প্রসব করেছেন; অথবা কোথাও বয়স্ক মায়েরা আর্তকান্নায় চোরাকারবারিদের হাত থেকে নিজ সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইছেন; আরও আছে অগণিত দুস্থ পরিবার, যারা বর্ষার তুমুল বৃষ্টিতে পাতলা তাঁবুর আশ্রয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। না আছে সুযোগ বাড়ি ফেরার, না ভাগ্যকে ঠেকানোর।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের এই সংকটের দীর্ঘকালব্যাপী সমাধানের চাবিকাঠি রয়েছে মিয়ানমার সরকারের হাতে। মিয়ানমারের ভূমিকা এখানে মুখ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে এ বিষয়ে অবিরত সমর্থন করা। এখানে রাতারাতি কোনো সমাধান হয়তো পাওয়া যাবে না, তবে এমতাবস্থায় বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোকেও বঙ্গোপসাগরে নৌকায় অসহায়ভাবে ভেসে থাকতে দেওয়া যায় না। উপার্জনক্ষম পুরুষ সদস্যের অবর্তমানে মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে অসহায় ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় একা ফেলে রাখা যায় না। ছোট ছোট শিশুকে শিক্ষার আলোর বাইরে অন্ধকারে অবহেলা করা যায় না।

যত দিন মিয়ানমার এই সমস্যার একটি সুদূরপ্রসারী সমাধান খুঁজছে, তত দিন আশ্রয় প্রদানকারী দেশ হিসেবে কিছু ন্যূনতম আতিথেয়তা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ এই সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদের প্রতি অসামান্য সংহতি প্রদর্শন করেছে। নিজেদের অসচ্ছলতা এবং জনসংখ্যা সমস্যা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেওয়ার এই নিদর্শন উদারতার দৃষ্টান্ত। শরণার্থী অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি শরণার্থী-অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রয়োজনগুলো চিহ্নিতকরণ এবং উন্নয়ন ঘটানোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বসময়ের মতো ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের সরকার এবং এর নাগরিকদের এ বিষয়ে সমর্থন করতে এগিয়ে আসতে প্রস্তুত।

শরণার্থী দিবস উদ্্যাপনকালে নিজেদের আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে যেসব ব্যক্তি বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তারা সবাই মানুষ এবং তারা কারও না কারও মা, বাবা, ভাই বা বোন। এমন একটি পরিবারও যদি সহিংসতার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে বিফল হব।

গোলাম আব্বাস, প্রতিনিধি, ইউএনএইচসিআর রিপ্রেজেন্টেশন অফিস, বাংলাদেশ।