শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আগে কিছু শর্ত পূরণ জরুরি

মুশতাক হোসেন

সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকা ও মাস্কের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে টিকা না নিয়ে বাইরে বের হলে সাজা দেওয়া বা মাস্ক ব্যবহার না করার জন্য গণহারে সাজা দেওয়ার আগে কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করা জরুরি।

সবার টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যাঁদের কাছে নিয়মিত মাস্ক কেনা একটা বাহুল্য। তাই সারা দেশে বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক হারে বিনা মূল্যে কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করতে হবে। যাতে ধুয়ে তা পুনরায় ব্যবহার করা যায়। আবার অনেকের মধ্যে মাস্ক পরার বিষয়ে একধরনের অনীহা আছে। তাঁদের কাছে মাস্কের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। মাস্ক পরতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এসব কাজ সরকার একা করতে পারবে না। মানুষকে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক শক্তিগুলোতে সম্পৃক্ত করতে হবে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে হয়তো এই কাজ করছেন, সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে একটি সমন্বিত রূপ দিতে হবে। একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এরপর প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে যাওয়া যেতে পারে সরকার। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, দমনমূলক বা শাস্তিনির্ভর ব্যবস্থায় খুব একটা সফল হওয়া যাবে না। এখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি।

টিকা, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, ছাত্র, শিক্ষকদের কাজে লাগানো খুবই জরুরি।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় মানুষের যাতায়াত ও সমাগম দেখে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সংক্রমণ বেড়ে যাবে। ঈদের পর থেকে ক্রমে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। জুন মাস থেকে ক্রমে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ থেকে ১৪ জুলাই দুই সপ্তাহের যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার একটি প্রভাব দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই বিধিনিষেধের তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। এখনো রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের আশপাশে, মৃত্যু দুই থেকে আড়াই শ-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। মন্দের ভালো এই যে এই সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যায়নি। এরপর পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। এরপর আবার রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হলো। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় কিছু ছাড় দিতে হচ্ছে। কিন্তু দেখতে হবে, যেসব ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর সবই অত্যাবশ্যকীয় কি না। ইদানীং যেসব ক্ষেত্রে শিথিলতা আসছে, তা অত্যাবশ্যকীয় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

ভিয়েতনাম এখন তৈরি পোশাক রপ্তানির অনেক ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। শুরুতে তারা বিধিনিষেধ শিথিল করেনি, একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছে। তারা অনেকটা সফলও হয়েছে। আমাদের দেশে এটা হচ্ছে না। তার কারণ, আমাদের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোতে দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা আছে। হয়তো আমরা জানি কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে, কিন্তু তারপরও ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছি। বিধিনিষেধ আরোপের ফলে অনেকে কাজ না করলেও তাঁদের বেতন বন্ধ হয় না। কিন্তু এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে সিংহভাগ মানুষই কষ্টে থাকেন। সবার জন্য দুই সপ্তাহের খাবারের জোগান আমরা দিতে পারছি না।

কিন্তু তারপরও এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে বিধিনিষেধ বহাল রাখতে হবে। মানুষের কষ্ট লাঘবের পথ বের করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক শক্তিকেও এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।