সত্য বলা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়

এমন দুজন সাংবাদিককে শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করে নোবেল কমিটি আমাদের এই বলে আশ্বস্ত করল, না, সবকিছু হারিয়ে যায়নি।

মারিয়া রেসা, দিমিত্রি মুরাতভ

নোবেল কমিটি এবার অভাবিত একটা কাজ করেছে। দুজন সাংবাদিক, যাঁরা নিজ দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্য প্রকাশের কাজ করে গেছেন, তাঁদের শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এই দুজন হলেন রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ ও ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা।

অভাবিত বলছি; কারণ, এর আগে নোবেল কমিটি অনেক সময় এমন সব ব্যক্তিকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেছে, যাদের কাজে শান্তি নয়, অশান্তিই বেড়েছে। ২০১৯ সালের নোবেল বিজয়ী ইথিওপিয়ার চলতি প্রেসিডেন্ট আবি আহমদের কথা ধরুন। নিজ দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত তিগ্রের বিদ্রোহী নাগরিকদের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে তিনি যা করে চলেছেন, তাঁকে ঢালাও জাতি হত্যা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। জাতি হত্যার জন্য আরেক অভিযুক্ত নোবেলজয়ী হলেন মিয়ানমারের অং সান সুচি। এই শান্তি পুরস্কার বিজয়ী রাজনীতিক নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর সামরিক বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার বিরোধিতার বদলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এসে তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার ও ইসরায়েলের মেনাখেম বেগিনকেও একই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। সেই নোবেল কমিটি যখন দুজন প্রকৃত সাহসী মানুষকে সম্মানিত করে, তখন বিস্মিত হতে হয় বৈকি। তবে সত্যি সত্যি যা অভাবিত, তা হলো ক্ষমতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই দুই সাংবাদিক কীভাবে দীর্ঘদিন সত্য প্রকাশের লড়াই চালিয়ে গেছেন।

মারিয়া বলতে গেলে এক হাতে তার প্রতিবাদ করে গেছেন। কোনো রাজনৈতিক প্রচারণা নয়, যা সত্যি শুধু সে কথাটাই বলেছেন। তাঁকে রুখতে দুতার্তে সরকার ও তার দোসররা একের পর এক মামলা করে গেছে। তাঁকে জেলে পোরা হয়েছে। তাঁর ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কম করে হলেও ১০টি মামলা ঝুলছে। এর একটাই উদ্দেশ্য—তাঁকে হেনস্তা করা। মারিয়াকে হত্যার হুমকি শুনতে হয়েছে, বলাৎকারের হুমকির মখে পড়তে হয়েছে।

সত্যসন্ধানী সাংবাদিকদের একজন তিনি

দিমিত্রি মুরাতভ তেমন কোনো পরিচিত নাম নয়, কোনো ঢাকঢোল না পিটিয়ে তিনি একরকম নিভৃতে রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এক আপসহীন কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গেছেন। নভোয়া গাজিয়েতা নামের যে পত্রিকার তিনি প্রধান সম্পাদক, প্রায় ৩০ বছর আগে তার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের সহায়তায়। তিনিও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, সেই পুরস্কারের অর্থ দিয়েই পত্রিকার প্রতিষ্ঠা। স্বভাবত নিম্নকণ্ঠ হলেও সত্য প্রকাশের জন্য মুরাতভকে কম হেনস্তা হতে হয়নি। ক্রেমলিনের সমালোচনা করেন, অতএব তিনি ‘ফরেইন এজেন্ট,’ এই ঢালাও অভিযোগ তাঁকে শুনতে হয়েছে। মস্কোতে তাঁর অফিস একাধিকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক প্যাকেট পাঠিয়ে তাঁকে ও অন্যান্য সংবাদকর্মীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন পত্রিকার একাধিক সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত আনা পলিতকভস্কাইয়া ও ইউলিয়া লাতিনিনার মতো সাংবাদিক। ২০১৮ সালে নভোয়া গাজিয়েতার অফিসে মুরাতভের নামে এক গোছা ফুল দিয়ে বলা হয়েছিল, মৃত্যুর জন্য তৈরি হও। সে ফুল তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগাম উপহার।

পুরস্কার পেয়েছেন—এ কথা জানার পর মুরাতভের মন্তব্য ছিল, স্বাধীন তথ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে আক্রমণ, তা আসলে সত্যি কথা বলতে চায় এমন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ। সন্দেহ নেই, সেই সব সত্যসন্ধানী সাংবাদিকের তিনি একজন।

ক্ষমতাসীনেরা অপ্রিয় সত্য শুনতে প্রস্তুত নয়

ফিলিপাইনের জনপ্রিয় ডিজিটাল মিডিয়া র‍্যাপ্লারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা আমাদের কাছে অনেক দিন থেকেই পরিচিত। একসময় ফিলিপাইনে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের ব্যুরো প্রধান ছিলেন। ২০১২ সালে র‍্যাপ্লার প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালে রদ্রিগো দুতার্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মানবাধিকারের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেন, মারিয়া বলতে গেলে এক হাতে তার প্রতিবাদ করে গেছেন। কোনো রাজনৈতিক প্রচারণা নয়, যা সত্যি শুধু সে কথাটাই বলেছেন। তাঁকে রুখতে দুতার্তে সরকার ও তার দোসররা একের পর এক মামলা করে গেছে। তাঁকে জেলে পোরা হয়েছে। তাঁর ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কম করে হলেও ১০টি মামলা ঝুলছে। এর একটাই উদ্দেশ্য—তাঁকে হেনস্তা করা। মারিয়াকে হত্যার হুমকি শুনতে হয়েছে, বলাৎকারের হুমকির মখে পড়তে হয়েছে। তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বিদেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, ভাড়াটে গুন্ডাদের হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। ম্যানিলার এক আদালত তাঁকে র‍্যাপ্লারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শুধু একটি ‘টাইপো’ বা মুদ্রণবিভ্রাট থাকায় ছয় বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। সে মামলা তিনি এখনো লড়ে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট দুতার্তে তাঁর নাম নিয়ে বলেছেন, এই নারী একটা ‘আস্ত বাটপার’। ওকে আমি দেখে নেব।

পুরস্কার পেয়েছেন—এ কথা জানার পর মুরাতভের মন্তব্য ছিল, স্বাধীন তথ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে আক্রমণ, তা আসলে সত্যি কথা বলতে চায় এমন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ। সন্দেহ নেই, সেই সব সত্যসন্ধানী সাংবাদিকের তিনি একজন।

দুতার্তের হুমকিতে মারিয়া রেসা উদ্বিগ্ন হয়েছেন কোনো সন্দেহ নেই, পুরো একটি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ নয়। কিন্তু নুয়ে পড়েননি। ভয় পাননি। দুতার্তে তাঁকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়ার পর সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের তো একটাই অপরাধ, আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছে কিছু কঠোর প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলাম। এরা কোনো অপ্রিয় সত্য শুনতে প্রস্তুত নয়, কিন্তু আমরা যদি সে সত্য প্রকাশ না করি, তাহলে সে সত্য কখনোই প্রকাশিত হবে না। আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হওয়া মানে গণতন্ত্রের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা।

সাংবাদিকেরা যখন নিগ্রহের মুখে

সাংবাদিকতা অন্য আর যেকোনো পেশার মতো একটা পেশা। কারও বিরুদ্ধে লড়াই করা তার কাজ নয়। দেশে-বিদেশে যা ঘটছে, বস্তুনিষ্ঠভাবে সেকথা প্রকাশই সাংবাদিকের কাজ। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় কোনো কোনো দেশে নিজেদের পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের নিগ্রহের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, বন্দুকের নলের মুখে এবং বুটের নিচে মৃত্যুর হুমকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ২০২০ সালের প্রতিবেদনে দেখছি, সে বছর নিজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেলে আটক হয়েছেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যা ২৭৪। করোনাকালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা, সিপিজের ভাষায়, আসলে একধরনের সেন্সরশিপ। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা যাতে প্রকাশিত না হয়, সে জন্য তাঁদের মুখ টিপে ধরার এই ব্যবস্থা।

অন্য কথায়, যখন কোনো সাংবাদিক বা কোনো সংবাদপত্রের ওপর আক্রমণ হয়, তার আসল লক্ষ্য থাকে সত্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ। সত্য গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, ঠিক এই কারণেই সংবাদব্যবস্থার ওপর আক্রমণ এলে গণতান্ত্রিক নিয়মতান্ত্রিকতা ও মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সিপিজের প্রতিবেদনে যে কয়টি দেশকে সাংবাদিক নিগ্রহের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও ফিলিপাইন। এসব দেশ নিজেদের যে নামে পরিচয় দিক না কেন, তাদের প্রকৃত গণতান্ত্রিক বোধ হয় বলা যায় না। প্রতিবেদনে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থাকেও সাংবাদিকদের জন্য ‘নিরাপদ নয়’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে এই পুরস্কার : মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও স্থায়ী শান্তির একটি পূর্বশর্ত। সেই স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখার জন্য মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভকে ২০২১ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ফিলিপাইন ও রাশিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা যে সাহসী লড়াই চালিয়ে গেছেন, এই পুরস্কার তারই স্বীকৃতি। আজকের পৃথিবীতে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে। এই সংকট সত্ত্বেও বিশ্বের অনেক সাংবাদিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাসী। তাঁদের সবার পক্ষে মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ এই পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন। নোবেল পুরস্কার কমিটির ঘোষণা, অসলো, ৮ অক্টোবর ২০২১

ভারতের কথা ধরুন। গবেষণা সংস্থা ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের হিসাব অনুসারে, ২০১০–২০২০ সালের মধ্যে নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সেখানে কারাবন্দী হয়েছেন অথবা মামলার সম্মুখীন হয়েছেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যা ১৫৪। এর ৪০ শতাংশ ঘটেছে ২০২০ সালে। চলতি ভারত সরকার ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ নয় এমন সংবাদমাধ্যমকে কীভাবে নিজের তালুর নিচে রাখতে চায়, তার এক সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ওয়েব পত্রিকা নিউজক্লিকের ৭৩ বছর বয়স্ক সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থের গৃহে পুলিশি তল্লাশি। এই তল্লাশি মোট ১১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পাশাপাশি ওয়েব অফিসে যে তল্লাশি চলে, তা স্থায়ী হয় ৩৬ ঘণ্টা। পুরকায়স্থ বলেছেন, তাঁর একমাত্র অপরাধ, তিনি বর্তমান মোদি সরকারের একজন কড়া সমালোচক। শুধু তিনি নন, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে যে কৃষক বিক্ষোভ চলছে, তার সবিস্তার বিবরণ প্রকাশ করায় ‘দেশদ্রোহের’ মামলায় পড়েছেন ইন্ডিয়া টুডের অন্যতম সম্পাদক রঞ্জিত সারদেশাইসহ আরও ছয়জন সাংবাদিক। নতুন যে ডিজিটাল আইন হয়েছে, তাতে সাংবাদিকদের বিপদ বেড়েছে শতগুণ। ভারতের এডিটরস গিল্ড পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে বাংলাদেশেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসছে। সিপিজে ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, এই আইনে ৯০০–র বেশি মামলা দায়ের হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে যা করা হয়েছে কোভিড-বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য। যেমন তরুণ কার্টুন শিল্পী আহমেদ কবির কিশোরকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে ‘মিথ্যা প্রচারের’ অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের পর কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ মারা গেছেন।

মানবাধিকার সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, কোভিড–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সূচক বা অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২। ইতিপূর্বে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিপদ এড়াতে বাংলাদেশে সাংবাদিকেরা এখম নিজেরাই ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ বেছে নিয়েছেন। একজন সম্পাদকের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতি মুহূর্তে তাঁকে নিজের ও নিজের ছায়ার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।

তাদের চোখে বিপজ্জনক এমন তথ্য গোপন রাখতে শুধু সরকার নয়, ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা সংস্থাও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে। পাকিস্তানের পুচ্ছানো পত্রিকার ২৭ বছর বয়স্ক অনুসন্ধানী সাংবাদিক অজয় লালওয়ানির কথা ধরুন। এ বছরের মার্চে সিন্ধু প্রদেশের এক সেলুনে নিজের চুল কাটানোর সময় দিনের বেলা প্রকাশ্যে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অপরাধ—সিন্ধুতে সংখ্যালঘু হিন্দু মেয়েদের জোর করে ধর্মান্তরের বিবরণসহ একাধিক প্রতিবেদন তিনি লিখেছিলেন। ডন পত্রিকার কথায়, লালওয়ানি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চোখে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। এই পত্রিকা অনুসারে, সত্য বলতে গিয়ে মাথার পেছনে বুলেট নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে পাকিস্তানের সংবাদকর্মীদের।

আজকের পৃথিবীতে কর্তৃত্ববাদের উত্থান ঘটছে, তার ফলাফল হিসেবে সংকুচিত হয়ে আসছে তথ্যব্যবস্থার স্বাধীনতা। রাশিয়া, ফিলিপাইন অথবা ভারতের দিকে তাকিয়ে বোঝা যায়, এসব দেশের অতি ক্ষমতাধর নেতাদের সবচেয়ে ভয় সত্যকে, যে সত্য একমাত্র সংবাদপত্রই পারে প্রকাশ করতে। যে দেশে সংবাদপত্র যত স্বাধীন, সে দেশের গণতন্ত্র ঠিক সেই অনুপাতে পোক্ত। একথা বিশ্বাস করতেন বলেই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন একসময় মন্তব্য করেছিলেন, যে দেশে সংবাদপত্র স্বাধীন নয়, সেখানে কেউই নিরাপদ নয়।

চারদিকে যখন এমন ঘন আঁধার, তখন মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ আমাদের কাছে আঁধারে আলো হয়ে হাজির হন। বিপদ জেনেও তাঁরা নুয়ে পড়েননি, ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। সত্য বলা কঠিন, কিন্তু একদম অসম্ভব নয়, তাঁদের কাজের ভেতর দিয়ে সেকথার প্রমাণ মেলে। এমন দুজন সাংবাদিককে শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করে নোবেল কমিটি আমাদের এই বলে আশ্বস্ত করলেন, না, সবকিছুই হারিয়ে যায়নি। আঘাতে নুয়ে পড়লেও পরাস্ত হয় না, এমন মানুষ এখনো আছে।