সবার জন্য ‘ফ্রি মানি’র স্বপ্ন

বছরের পর বছর এই দেশে বাজেট নিয়ে যে আলোচনা হয়, সেটা ‘প্রাগৈতিহাসিক’। অবশ্য এটাই হওয়ার কথা; বাজেটই যদি হয় ‘প্রাগৈতিহাসিক’, তাহলে তার আলোচনাটাও সে রকম হতে বাধ্য। প্রতিবছর বাজেট প্রণয়ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখার চেষ্টা করি বাজেট কতটা বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানবান্ধব হলো, কিসের দাম বাড়বে–কমবে, সমালোচনা করি কেন আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপির ১ শতাংশের নিচে (যেটা হওয়া উচিত কমপক্ষে ৫ শতাংশ), কেন আমরা এখনো জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ না করে করছি তার এক-তৃতীয়াংশ, কেন সামাজিক সুরক্ষা বাজেটে প্রকৃত বরাদ্দ এত কম, কেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সামাজিক সুরক্ষার মতো কল্যাণ খাতের জিডিপির অনুপাতে বাজেটের বরাদ্দে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা কেন সবচেয়ে নিচে।

যৌক্তিকভাবেই আমরা প্রশ্ন করি কেন বাংলাদেশে এখনো এত অদক্ষ একটা করব্যবস্থা আছে যে আমাদের রাজস্ব জিডিপির অনুপাত এখনো ১০ শতাংশের নিচে, আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে যা আমাদের তুলনায় দেড় থেকে আড়াই গুণ পর্যন্ত। আমরা যৌক্তিকভাবেই কথা বলি আমাদের সম্পূর্ণ রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের হিস্যা এক-তৃতীয়াংশের নিচে থাকা নিয়ে। আমরা আলোচনা করি উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের অদক্ষতা নিয়ে, সুশাসনের অভাব নিয়ে এবং সর্বোপরি সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে, যা না থাকলে এই বরাদ্দেও হতে পারত অনেক কিছু।

সমস্যা হচ্ছে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ আলোচনাগুলো করতে করতে আমরা ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম–এর মতো বর্তমান অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচনায় আনতে পারি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই আলোচনা দ্রুত জনপরিসরে আসা উচিত।

এই ধারণা অনুয়ায়ী একটা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কোনো রকম শর্ত ছাড়াই সমান পরিমাণ অর্থ (ফ্রি মানি) দেবে। ব্যয়ের রাষ্ট্র কোনো ক্ষেত্র ঠিক করে দেবে না; যে কেউ যেকোনোভাবেই সেই অর্থ ব্যয় করার অধিকার রাখবে।

‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ কী?
নানা পরিভাষা থাকলেও এই নামেই এটা বেশি পরিচিত, তাই এই নামটিই আমি ব্যবহার করছি। পরবর্তী সময়ে এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ইউবিআই’ ব্যবহার করব। এই ধারণা অনুয়ায়ী একটা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কোনো রকম শর্ত ছাড়াই সমান পরিমাণ অর্থ (ফ্রি মানি) দেবে। ব্যয়ের রাষ্ট্র কোনো ক্ষেত্র ঠিক করে দেবে না; যে কেউ যেকোনোভাবেই সেই অর্থ ব্যয় করার অধিকার রাখবে।

এই ক্ষেত্রে তাত্ত্বিকভাবে বলা হয়, রাষ্ট্রের সবচেয়ে দরিদ্র থেকে শুরু করে সবচেয়ে ধনী মানুষটি পর্যন্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে একটা ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র পৌঁছে দেবে। এর ন্যূনতম পরিমাণটি হবে একজন নাগরিক দারিদ্র্যসীমার ওপরে জীবন যাপন করার জন্য ন্যূনতম যতটা অর্থের প্রয়োজন ঠিক ততটা। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী এই পরিমাণ এর চেয়ে যত বেশি হয়, ততই ভালো।
সব রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সামর্থ্য সমান নয়। তাই কোনো রাষ্ট্র চাইলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের জন্য অথবা মধ্যবিত্ত পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ করতে পারে। আবার কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠে আসতে পারে সেই পরিমাণ অর্থ দেওয়া সম্ভব না হলে তার চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আর ইউবিআই না বলে তাকে কোয়াসাই বেসিক ইনকাম বলা হবে।

নাগরিকদের মনে রাখা উচিত হবে সরকার যা–ই করুক না কেন, সেটা করে নাগরিকের টাকায়, কখনো তার দেওয়া রাজস্বে, আবার কখনো তার নামে নেওয়া ঋণে। সুতরাং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল পরোক্ষভাবে তো বটেই, প্রত্যক্ষভাবে পাওয়াও নাগরিক অধিকার। এ জন্যই ইউবিআইকে অনেকেই বলেন সিটিজেনস ডিভিডেন্ড।

ধারণাটি মোটেও সাম্প্রতিক কালের নয়
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ভিত্তি করে সর্বব্যাপী অটোমেশনের কারণে সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ অতি কম সময়ের মধ্যে বেকার হয়ে পড়বে, এটা নিয়ে এখন আর দ্বিমত নেই। বিতর্ক যতটুকু আছে, সেটুকু হচ্ছে এর মাত্রা কতটা বেশি হবে, সেটা নিয়ে। ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক ধনকুবেররা এই বেকারত্ব থেকে জনগণকে বের করে নিয়ে আসার জন্য ইউবিআইয়ের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁরা মিডিয়ার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকেন বলে তাঁদের এই আহ্বান অনেক মানুষের কাছে পৌঁছেছে। ধাবমান এই বেকারত্বের কারণে অনেক অর্থনীতিবিদও এই একই প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। তবে এই ধারণাটি আদৌ নতুন ধারণা নয়, অনেক পুরোনো।

১৫১৬ সালে দার্শনিক থমাস মুর তার ইউটোপিয়া বইতে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকামের কথা বলেন। ১৭৯২ সালে আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের একজন, থমাস পেইন ধনী-দরিদ্র সবার জন্য এটা নিশ্চিত অর্থ বরাদ্দের কথা বলেন। ইউবিআইয়ের প্রবক্তাদের মধ্যে আছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রও। তবে এই তালিকায় থাকা একজনের নাম আমাদের অনেককে চমকে দেবে—নিওলিবারেল ইকোনমিকসের বড় প্রবক্তা মিল্টন ফ্রিডম্যান। ফ্রিডম্যান একে বলেছেন নেগেটিভ ইনকাম ট্যাক্স। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতিসহ নানা কারণে রাষ্ট্রীয় ওয়েলফেয়ারের যে অপচয় এবং অব্যবস্থাপনা হয়, সেটা থেকে দূরে সরে আসার জন্য তিনি বরং রাষ্ট্রীয় ওয়েলফেয়ারের পরিবর্তে এটাকে সমর্থন করেছেন।

ফ্রি মানি কি মানুষের কর্মোদ্দীপনা ধ্বংস করবে?
নাগরিকদের জন্য ইউবিআই নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের যথেষ্ট আর্থিক সংগতি হবে কি না, সেই বিতর্ককে ছাপিয়ে এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে যুক্তি আসে, সেটা হচ্ছে এটা মানুষের কর্মোদ্দীপনা ধ্বংস করে দেবে। সেই টাকায় খেয়ে-পরে নিশ্চিত জীবন পেয়ে মানুষ পরিশ্রম করবে না, তাই মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।

১৯৭০–এর দশকে কানাডায় এক পরীক্ষায় দেখা যায় নিয়মিত ফ্রি মানি পাওয়ার পরও মাত্র ১ শতাংশ মানুষ কাজ ছেড়েছে। ছাড়ার কারণ সন্তানকে যত্নে বড় করে তোলা। আমরা এটা স্মরণ রাখব সন্তানকে যোগ্য করে সঠিকভাবে গড়ে তোলাও রাষ্ট্রের জন্য একটা বড় বিনিয়োগ।

হিউম্যানকাইন্ড: আ হোপফুল হিস্ট্রি বইয়ের লেখক রুটগার ব্রেগম্যান দাবি করেছেন, যে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষকে প্রকৃতিগতভাবেই নেগেটিভ চরিত্রের সৃষ্টি হিসেবে ধরে নিয়েই যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তিনি যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মানুষ প্রকৃতিগতভাবে বরং তার উল্টো। ডাচ এই ইতিহাসবিদ বর্তমানে ইউবিআইয়ের একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রচারকও।
ইউবিআই আসলেই মানুষের কর্মোদ্দীপনা ধ্বংস করে কি না, সেটা নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার ফলাফল দেখলে ব্রেগম্যানকেই সঠিক বলে মনে হবে। ১৯৭০–এর দশকে কানাডায় এক পরীক্ষায় দেখা যায় নিয়মিত ফ্রি মানি পাওয়ার পরও মাত্র ১ শতাংশ মানুষ কাজ ছেড়েছে। ছাড়ার কারণ সন্তানকে যত্নে বড় করে তোলা। আমরা এটা স্মরণ রাখব সন্তানকে যোগ্য করে সঠিকভাবে গড়ে তোলাও রাষ্ট্রের জন্য একটা বড় বিনিয়োগ। এ ছাড়াও দেখা গেছে ব্যক্তির ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা মাত্র ১০ শতাংশের কম কমেছে। এই সময়টাও সবাই নানা রকম কাজে লাগিয়েছেন—পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া, নতুন কোনো দক্ষতা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নতুন কোনো চাকরি খোঁজা ইত্যাদি। অর্থাৎ সেই সময়টুকুতে একজন নাগরিক আরও যোগ্য হয়ে উঠেছেন, যেটা আখেরে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে।

ইউবিআইয়ের ধারণা কি শুধু ধনী রাষ্ট্রগুলোর জন্যই প্রযোজ্য?
উন্নত দেশগুলোতে বেশি হলেও ইউবিআই নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে আমাদের মতো অর্থনীতির দেশেও। নামিবিয়া, উগান্ডার মতো দেশের সঙ্গে ইউবিআই নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষা হয়েছে মাথাপিছু জিডিপির বিচারে আমাদের একেবারেই সমপর্যায়ের দুটি দেশ কেনিয়া ও ভারতে (মধ্যপ্রদেশ)।
দুটি দেশেই দেখা গেছে, কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় ইউবিআইপ্রাপ্ত মানুষের দারিদ্র্য অনেক বেশি কমেছে, অসমতা কমেছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে অনেক দ্রুত, কমেছে অপুষ্টি, রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, যা কমিয়ে এনেছে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয়। আর অনেক বেড়েছে স্কুলে যাওয়ার হার, স্কুলের টিকে থাকার সময়, স্কুলের পারফরম্যান্স, ব্যক্তিগত সঞ্চয়ও সবচেয়ে জরুরি, অনেক বেড়েছে নানা রকম ব্যক্তিগত উদ্যোগ-ব্যবসা।

করোনাকালে কেনিয়াতে ইউবিআই পাওয়া মানুষগুলো অত্যন্ত ভালোভাবে এর অভিঘাত সামলাতে পেরেছেন এমন গবেষণা দুবছর আগে নোবেল পাওয়া অভিজিৎ ব্যানার্জি করে দেখিয়েছেন। ফ্রি মানি পেলে দরিদ্র মানুষ নেশা করে আর জুয়া খেলে টাকা উড়িয়ে দেবে এমন ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে প্রতিটি পরীক্ষায়।

বাংলাদেশে কী করতে পারি আমরা?
আমরা অনেকেই জানি না ভারতে গত সাধারণ নির্বাচনে ইউবিআই একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়েছিল। ভারতীয় কংগ্রেস নির্বাচনে জিতলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ইউবিআইয়ের ব্যবস্থা করবেন বলে বলেছিলেন। অনেকেই এটা করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, যিনি একসময় বিজেপি সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং যিনি পরে সেই পদ থেকে সরে গিয়ে জিডিপিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো নিয়ে বিজেপি সরকারকে তুলাধোনা করেছেন সেই অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান দেখিয়েছেন এমন পদক্ষেপ ভারতের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মধ্যে খুবই সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা সহজ হিসাব করা যাক। সব মানুষকে ইউবিআই নিশ্চিত করছি না এবং ধরে নিই দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠে আসার পরিমাণেও অর্থ দিচ্ছি না। অর্থাৎ এটা একটা কোয়াসাই বেসিক ইনকাম হবে। ৫ কোটি মানুষকে আমরা যদি ১০০০ টাকা করে মাসে শর্তহীনভাবে দিই, তাহলে বছরে প্রয়োজন হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরের জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এর আওতা এবং পরিমাণ অনেক বাড়ানো সম্ভব।

শুরুতেই বলেছিলাম করোনাকালীন অর্থবছর ছাড়াও বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপির অনুপাত মাত্র ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। ভারতে এটা দ্বিগুণ আর নেপালে প্রায় আড়াই গুণ। আমরা যদি অন্তত দ্বিগুণ অনুপাতে যেতে পারি তাহলে জিডিপির আরও ১০ শতাংশ আমাদের হাতে আসে। সেটা দিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য যেমন বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব তেমনি দ্রুত ওটুকু অর্থ সাহায্য সমাজের দরিদ্র মানুষকে দেওয়া শুরু করা যায়। বিশেষ করে ওয়েলফেয়ার খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিতে সময় প্রয়োজন হয়, তাই এভাবে ফ্রি মানি দিয়েই মানুষকে দ্রুত রাষ্ট্রীয় কল্যাণের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

নিশ্চিতভাবেই অর্থ দিয়ে সুখ কেনা যায় না। কিন্তু যে মানুষটা জীবন ধারণের জন্য একেবারে ন্যূনতম অর্থের সংস্থান করতে পারেন না, তাঁর জীবনে অকল্পনীয় রকমের মানসিক চাপ, বিষণ্নতা তৈরি হয়।

সমাজের প্রান্তিক মানুষের হাতে অর্থ যাওয়ার এক বিরাট অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। আমেরিকার হিসাবে দেখা গেছে, ধনী একজন মানুষের কাছে যদি এক ডলার যায় তবে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় মাত্র ৩৯ সেন্ট। আর সেটা যদি একজন কম সামর্থ্যের মানুষের কাছে যায় তবে অর্থনীতিতে তার প্রভাব হয় ১ ডলার ২১ সেন্ট। অর্থাৎ তিন গুণের বেশি। আমাদের মতো অর্থনীতির দেশে এই প্রভাব আরও বেশি হবে। বাজারে চাহিদা সৃষ্টিজনিত কারণে দেশের শিল্প–বাণিজ্যের খুব বড় চাঙাভাব তৈরি হবে, যা বড় সংখ্যায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। সুতরাং এই মুহূর্তে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত মানুষকে এই ধরনের ইউবিআইয়ের আওতায় আনা না গেলে তাঁরাও খুব বড় সুফল পাবেন এই মুহূর্তেই।
বলছি না, আজই এটা কার্যকর করতে হবে। জোর গলায় প্রশ্ন করতে চাই, ঠিক আমাদের সমান মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে কেনিয়া বা ভারত যখন অনেক সময় ধরে এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরা কেন দ্রুত এটা শুরু করছি না? কেনইবা আমাদের জনপরিসরে এটা নিয়ে জোর আলোচনা বা বিতর্ক এখনো শুরু হয়নি? বিতর্ক হলে তো আমরা অন্তত আমাদের জন্য উপযোগী একটা পন্থা বের করতে পারতাম।

ইউবিআই এবং গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (জিএনএইচ)

নিশ্চিতভাবেই অর্থ দিয়ে সুখ কেনা যায় না। কিন্তু যে মানুষটা জীবন ধারণের জন্য একেবারে ন্যূনতম অর্থের সংস্থান করতে পারেন না, তাঁর জীবনে অকল্পনীয় রকমের মানসিক চাপ, বিষণ্নতা তৈরি হয়। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে অন্তত একটি কোয়াসাই বেসিক ইনকাম সমাজের একেবারে প্রান্তিক মানুষগুলোকে ভয়ংকর সংকটের মধ্যে মানসিক স্বস্তি দেয়, এটাও এক অমূল্য প্রাপ্তি সমাজের জন্য। শুধু অর্থের নিরিখে একটা দেশের উন্নতি পরিমাপের জায়গা থেকে পৃথিবী সরে যেতে শুরু করেছে দীর্ঘদিন আগেই। আমাদের পাশের ছোট্ট দেশ ভুটান গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (জিএনএইচ) পরিমাপ করে পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে। এটা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা যাবে আরেক দিন।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে–এর শিক্ষক