হাসিঠাট্টার দুর্দিনে গণতন্ত্রের সম্মেলন

সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রে হাসিতে এত অ্যালার্জি কেন প্রভাবশালীদের? প্রশ্ন উঠেছে, তবে এটা কি গণতন্ত্রহীনতার কফিনে শেষ পেরেকের মতো হয়ে উঠছে?

রাজনৈতিক চাপের মুখে কৌতুক ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের মুনাওয়ার ফারুকি। তাঁর অবস্থান ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন দেশটির খ্যাতনামা শিল্পী মনজুলটুইটারের সৌজন্যে

ঠাট্টা-মশকরা সমাজের সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কিন্তু ‘হিউমার’ বা কৌতুককে আর নিতে পারছে না সমাজে অনেকে। বিশেষ করে যাঁরা ‘প্রভাবশালী’। তারই শিকার মুনাওয়ার ফারুকি। ভারতের আলোচিত কৌতুকশিল্পী তিনি। দর্শক-শ্রোতার সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি পারফর্ম করতেন। গেল সপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে পেশা থেকে ইস্তফা দিলেন শাসক রাজনীতির চাপে।

এ রকম সাংস্কৃতিক দুঃসংবাদের সমসাময়িক নজির বিস্তর। তালেবান ক্ষমতায় এসেই হত্যা করেছিল কান্দাহারের কমেডিয়ান নজর মোহাম্মদকে। স্থানীয়দের কাছে তিনি খাসা জওয়ান নামে পরিচিত ছিলেন। গত এপ্রিলে বেইজিংয়ের থিয়েটারে এক কমেডি শোকে প্রায় সাত হাজার ডলার জরিমানা করেছে সে দেশের সরকার। একই সময় রেঙ্গুনে মিয়ানমার সরকার আটক করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ৬০ বছর বয়সী জারগানাকে। এসব মনে করিয়ে দেয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এনবিসিতে কমেডি শো ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ বন্ধ করতে খুব চেষ্টা করেছিলেন সে সময়। এই অধ্যায়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কার্টুন আঁকিয়েদের নামও যুক্ত করতে চায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তাঁরা এখন আর আঁকেন না—বহুমুখী শঙ্কায়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রে হাসিতে এত অ্যালার্জি কেন প্রভাবশালীদের? এটা গণতন্ত্রহীনতার কফিনে শেষ পেরেকের মতো হয়ে উঠছে কি না?

মুনাওয়ার যে কারণে আর কৌতুক করতে চাইছেন না

মুনাওয়ার ফারুকির জন্ম গুজরাটের জুনাগড়ে। মুসলমানদের জন্য গুজরাট সুবিধার জায়গা নয়। তাই ২০০৭ সালে মুনাওয়ারের পরিবার চলে আসে মুম্বাইয়ে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান মুনাওয়ার নানান পেশা শেষে থিতু হন কৌতুক বলিয়ে হিসেবে। গানও করেন মাঝেমধ্যে। দেড় বছরে ইউটিউবে তাঁর চ্যানেল দেখতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ। কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে ‘অপরাধী’ হিসেবেও তাঁর অপবাদ জুটতে থাকে।

২০২১-এর শুরু থেকে মুনাওয়ার কমেডি শো নিয়ে বড় ধরনের বাধায় পড়তে থাকেন। ১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠান থেকে মধ্যপ্রদেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে। ধর্মবাদী এই দলের কর্মীদের অভিযোগ, মুনাওয়ার তাঁদের নেতা অমিত শাহকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন। ৩৭ দিন কারাভোগের পর ওই দফায় মুক্তি পেলেও বিজেপি ও তার বন্ধু সংগঠনগুলো মুনাওয়ারের বিরুদ্ধে লেগেছিল। যেখানেই তাঁর শো থাকত, সেখানেই বাধা আসত। সর্বশেষ এ রকম ঘটে কর্ণাটকে। ত্যক্তবিরক্ত মুনাওয়ার শেষ পর্যন্ত নভেম্বরে কৌতুকাভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিলেন। এ-ও জানালেন, সর্বশেষ দুই মাসে তাঁর ১২টা অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে বিরুদ্ধবাদীদের আপত্তিতে। এ রকম বাধাদানকারীদের রুখতে রাষ্ট্র খুব একটা আগ্রহী নয়; কারণ, ভারতে অন্তত ১৮ রাজ্যে একক বা জোটগতভাবে বিজেপি ক্ষমতায়। ফলে সেখানে তাদের নিয়ে কৌতুক করে রক্ষা নেই।

শিল্পকলার ওপর ‘ভাবমূর্তি’ ও ‘অনুভূতি’র তলোয়ার

মুনাওয়ার কেন এত বাধা পেলেন এবং কেন তাঁকে অভিনয় ছাড়তে হলো, এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলছে। বড় একদল মানুষের কাছে এর কারণ তাঁর ধর্মপরিচয়। আরেক অংশ বলছে, ধর্ম-জাতিনির্বিশেষে দেশটিতে মুক্তচিন্তা ও তার প্রকাশের রাস্তা ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মুনাওয়ার তার সর্বশেষ শিকার। উদাহরণ হিসেবে ভির দাসের কথা উঠেছে। ইনিও ভারতীয় এবং ধনাঢ্য হিন্দু। ‘ভারতের সমাজ নিয়ে কৌতুকের অপরাধে’ তিনিও মধ্যপ্রদেশে নিষিদ্ধ হলেন নভেম্বরে।

বাক্‌স্বাধীনতা কেবল গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি নয়। মানবসভ্যতার সামগ্রিক প্রগতির চাকা চালু থাকে মুক্ত মতের ডানায়
প্রতীকী ছবি

ভির দাস কৌতুক করেছিলেন সুদূর ওয়াশিংটনে। তাতেও মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রের গায়ে লেগেছে সেটা। ১২ নভেম্বর একটি উপস্থাপনায় ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক স্ববিরোধিতার কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে ভির দাস বলছিলেন, এখানে ‘মানুষ নারীকে পূজা করলেও আবার ধর্ষণও করছে, এখানে নিরামিষভোজী হওয়া নিয়ে গর্ব করা হয় অথচ শাকসবজি উৎপাদকদের মারা হয়।’ ‘দুই ভারত’ শিরোনামে প্রচারিত ভির দাসের এই কৌতুকে বিজেপি চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতির গন্ধ পায়। কিন্তু এই অভিনেতাকে নিষিদ্ধ করার ফরমানে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা—‘দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছেন তিনি’।

কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো সব সময় নিজেদের দেশ হিসেবে ভাবতে শুরু করে। তাদের রাজনীতিকেই দেশের ভাবমূর্তি আকারে হাজির করে। এ রকম দেশতুল্য শক্তির পক্ষে দাঁড়ানোর মতো ‘শিল্পী’রও অভাব হয় না কোনোকালে। ভারতেই কঙ্গনা রনৌতের মতো বিজেপি-সমর্থক অনেক শিল্পী ভির দাসের কৌতুককে একধরনের ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুনাওয়ারকে তাঁরা বলেন ‘বিতর্কিত চরিত্র’। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছেও জারগানা একই রকম ‘বিতর্কিত চরিত্র’। ২০০৮ সালে সরকার এই কৌতুক অভিনেতাকে একবার ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়ার পর এবার তাদের হাতে আবার আটক হন। গত ১৯ অক্টোবর শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ‘শর্ত’টি যে কী, সেটা পাঠকমাত্র বুঝতে পারবেন।

ফাইল ছবি

জারগানা, ভির দাস ও মুনাওয়ারের মতো অভিজ্ঞতা দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দেশে বহু অবাধ্য শিল্পীর ঝুলিতে আছে। ‘ভাবমূর্তি’ ও ‘অনুভূতি’র তলোয়ার হাসিঠাট্টাময় শিল্পকলার ওপর সব সময় ঝুলিয়ে রাখা আছে।

আফগানিস্তানে নজর মোহাম্মদকে হত্যা যে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, তার প্রমাণ এই নভেম্বরে প্রচারমাধ্যমের জন্য তালেবানের আট দফা নির্দেশনা। সেসব দফায় কৌতুক নিয়েও বিধিনিষেধ আছে। আফগান সমাজকে ‘নৈতিকভাবে শুদ্ধ’ রাখতে এ রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তালেবান নেতাদের যুক্তি।

গণতন্ত্রের দুর্দিনে মূলধারার রাজনীতির এ রকম যুক্তির প্রভাব পড়ছে বিদ্যমান আইন-আদালতেও। মুনাওয়ার ফারুকি ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার আগে তিন জায়গায় স্থানীয় আদালতে জামিনের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অক্টোবরে এনডিটিভিতে এক সাক্ষাৎকারে মুনাওয়ার জানিয়েছিলেন, তাঁর ফোনে প্রতিদিন বহুবার হত্যার হুমকি আসত। এর জন্য অবশ্য রাষ্ট্র ও সরকার তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রচর্চার যত আকাল দেখা যাচ্ছে—রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়ে ঠাট্টা-মশকরাকারীদের জেলে ভরতে তত সুবিধা হচ্ছে ক্ষমতাধরদের।

অথচ কর্তৃত্ববাদের কালে কার্টুন, কৌতুক ইত্যাদি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। রাজনৈতিক কৌতুকের গুরু জর্জ অরওয়েল একদা লিখেছিলেন, ‘কৌতুক সংক্ষিপ্ত বিপ্লবের মতো’। বিশেষ করে দমবন্ধ কর্তৃত্বের কালে। অরওয়েল এটা লিখেছিলেন ১৯৪৫ সালে লন্ডনের লিডার ম্যাগাজিনে। সেই লেখায় বিস্তারিত বিবরণ ছিল কীভাবে বিদ্যমান আইনতন্ত্রকে এড়িয়ে কৌতুক ‘ক্ষমতাধর’দের মাটিতে এনে দাঁড় করাতে পারে। সেই বলার পর, মাঝের ৭৬ বছরে কৌতুক ও কর্তৃত্বের পারস্পরিক মোকাবিলা দুনিয়াজুড়ে থেমে ছিল না। মুনাওয়ার কিংবা নজর মোহাম্মদ তার একদিকের শিকার। অন্যদিকের দৃশ্য হলো অনেকে এখনো হাল ছাড়েনি।

কর্তৃত্ববাদী সমাজে কার্টুন, কৌতুক ইত্যাদি জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। সমাজের আবেগ-অনুভূতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে তা। এসবে মানুষ তাদের অবদমিত আবেগের প্রকাশ দেখে স্বস্তি পায়, সুখের অনুভূতি বোধ করে। কিন্তু অনেক শাসক তাতে বিব্রতও বটে।

২৪ নভেম্বর বড় এক আন্তর্জাতিক সংবাদ ছিল এ রকম: গণচীন ৮৮ জন তারকা শিল্পীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে—‘দেশের নৈতিক মান’ লঙ্ঘনের দায়ে। আগের দিন দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেয়। ২০১৮-এর পর চীনে এ রকম ‘কালো তালিকা’র নবম কিস্তি এটা। এই ‘কালো’দের নিয়ে দেশটির কোনো সংস্থা বিনোদনমূলক কিছু বাজারজাত করতে পারবে না আর।

চীনের বাতাস লেগেছে হংকংয়েও। স্থানীয় পুলিশের আপত্তিতে সেখানে ‘হেডলাইনার’ নামের ৩১ বছরের পুরোনো টিভি কৌতুক শো বন্ধ হয়ে গেল গত বছরের মাঝামাঝি।

কৌতুক, কার্টুন, আঁকাআঁকি ইত্যাদির ওপর আঘাতের আরেক বিশ্ব ভরকেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা। এ বছরের জানুয়ারিতে আরব বসন্তের ১০ম বার্ষিকীতে মিসরের কার্টুনিস্ট আশরাফ হামদি ফেসবুক পেজে ‘ওরা আসছে’ নামে একটা ভিডিও ছেড়েছিলেন। সেই থেকে তিনি বন্দী। ফেসবুকে তাঁর অনুসারী ১২ লাখ। এ থেকে তাঁর প্রতি সামাজিক পক্ষপাত আঁচ করা যায়। ভারতীয় কুনাল কামরাও যোগাযোগমাধ্যমে অনুরূপ জনপ্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধেও এ বছর ‘আইন ব্যবস্থাকে কালিমালিপ্ত’ করার অভিযোগ তোলা হয়। বাস্তবে কুনালের গোপন অপরাধ—তিনি দেশটির শাসকদের একজন ভিন্নমতাবলম্বী। তাঁর চুটকিতে তার ছাপ পড়ে।

কুনাল ও মুনাওয়ারের ভাগ্য ভালো প্রাণে বেঁচে আছেন। মিসরের আশরাফ হামদির কপালে কী ঘটবে, সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু এ রকম সবাই নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করছে তীব্রভাবে। আবার এ-ও সত্য, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে টিকে থাকার সংগ্রামে অতিসতর্কতায় ছাপাকাগজ রম্যরচনাশূন্য হয়ে গেছে। শিশির ভট্টাচার্য্যের কার্টুন আর দেখা যায় না তাঁর পুরোনো কাগজে। কারাভোগের পর আহমেদ কবির কিশোর আবার কবে নির্ভয়ে আঁকবেন, তাঁর দর্শক সেটা জানে না।

নাগরিকদের নিজের চলচ্চিত্র দেখাতে চায় কর্তৃত্ববাদ

কর্তৃত্ববাদীরা যে হাসিঠাট্টা-চুটকি ভয় পান, অপছন্দ করেন, তারও কারণ আছে। অহিংস ধারার রাজনৈতিক সংগঠকেরা এসবকে অনেক দিন ধরে কাজের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই সূত্রেই ‘লাফটিভিজম’ নামে আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন স্কুল তৈরি হয়ে গেছে। রাজনৈতিক রসিকতা দেশে দেশে অগ্রগতির কথিত কল্পগল্প এবং বাস্তবতার ফারাকে আলো ফেলে, ভীতির আবহ বদলায়, জনতার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং কর্তৃত্বের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অথচ ‘কর্তৃপক্ষ’ চায় জনতা ভয়ে থাকুক এবং তারা নিজেরা থাকতে চায় প্রশ্ন ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। বরাবর তাঁদের প্রত্যাশা, শ্রোতা-দর্শক কেবল তাঁদের তৈরি ‘চলচ্চিত্র’ দেখবে- শুনবে-বিশ্বাস করবে। ফলে মুনাওয়ার ফারুকি থেকে বাংলাদেশের কলম গুটিয়ে নেওয়া কার্টুনিস্ট পর্যন্ত সবাই শাসকদের কাছে একটা প্রতিরোধী মনস্তত্ত্বের প্রতিনিধি। এ রকম মনোভাব এখন কোণঠাসা। কিন্তু এই প্রতিরোধী মনস্তত্ত্বের বয়সও রাজনীতির ইতিহাসের সমান, যা দীর্ঘ শীতঘুমের পর জেগে উঠতে সক্ষম আপন সৃষ্টিশীলতায়।

কার্টুন বা কৌতুক অভিনেতাদের দুর্দিনকে মতপ্রকাশের ওপর হামলার সম্প্রসারিত রূপ হিসেবেও দেখা যায়। ‘ভাবমূর্তি’ ও ‘অনুভূতি’ সুরক্ষার খোলসে ভিন্নমত দলনেরই বলি মুনাওয়ার, ভির দাস, নজর মোহাম্মদ কিংবা জারগানা। আল-জাজিরা ২৯ নভেম্বর লিখেছে, এদের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সেটা কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া নয়, রুটিরুজি কেড়ে নেওয়াও।

ভিন্নমতাবলম্বীকে এভাবে হাতে এবং ভাতে—উভয় পথে মারা গণতন্ত্রের অন্তিমযাত্রার সমকালীন এক খণ্ডাংশ। তবে এর সঙ্গে মিলিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন গণতন্ত্র সম্মেলনের উদ্যোগকে দেখা হয়, তখন নতুন আরেক বৈশ্বিক কৌতুক সামনে হাজির হয়। যে দেশ বিগত দশকগুলোতে বিশ্বজুড়ে ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর নামে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কয়েক ডজন সরকারকে মেরেকেটে অভ্যুত্থান করে হটিয়েছে, তারা এখন ‘গণতন্ত্রের সম্মেলন’ ডেকেছে। সেই আসরের দাওয়াতকে অনেক দেশের খুদে কর্তৃত্ববাদীরা নিজ নাগরিকদের কাছে তুলে ধরছে ইতিবাচক সনদ আকারে। আর আমন্ত্রণ না-পাওয়া সমগোত্রীয়দের জন্য এই ‘উৎসব’ হয়ে উঠেছে গভীর-গোপন মনঃকষ্টের কারণ। আপাতত এভাবেই জো বাইডেন রাজনৈতিক কৌতুকাভিনয়ের ইতিহাসে নতুন তারকা হিসেবে আবির্ভূত হলেন।

আলতাফ পারভেজ: ইতিহাস বিষয়ে গবেষক