হিজড়াদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ঢাকায় একটি মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে, যা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এই জনগোষ্ঠীর জন্য একটু একটু করে সুযোগ-সুবিধা আসছে, যা ইতিবাচক হলেও আরও দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের নাগরিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা উচিত।

বাংলাদেশে হিজড়া সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তাঁরা নারী বা পুরুষ নন, বরং তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। এ ছাড়া ভোট দেওয়া, এমনকি নির্বাচনে অংশ নিতেও তাঁদের আর বাধা নেই। ২০১৫ সালের পর কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে হিজড়ারা অংশ নিয়েছেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের যৌথ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে হিজড়াদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। তাই শিক্ষাবঞ্চিত এসব মানুষ সমাজের মূল স্রোতোধারায় মিশতে পারছেন না। এই প্রেক্ষাপটে ৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’। মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চালু হওয়া এই মাদ্রাসায় পড়ালেখার জন্য হিজড়াদের খরচ লাগবে না। কওমি সিলেবাস অনুযায়ী ধর্মীয় শিক্ষা পাবেন তাঁরা।

দেশে হিজড়ার সংখ্যা কত, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১০ হাজার। যদিও হিজড়াদের সংগঠনগুলো বলছে, তাঁদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েক গুণ বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার কিছু উদ্যোগ চোখে পড়ে। কিন্তু তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল জীবন-জীবিকার পথ বাতলে দেওয়া। তাঁদের শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের বিষয়টি সবাই মুখে মুখে গুরুত্ব দিলেও সেই কাজই কিন্তু হয়ে ওঠেনি। শহরে জীবিকার তাগিদে অনন্যোপায় হয়ে হিজড়াদের কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে অর্থসহায়তা চান। কেউবা হাটবাজারে টাকা বা পণ্য তোলেন, সে ক্ষেত্রে কিছু অসদাচরণের ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে সবাই তাঁদের উৎপাত মনে করে।

আমরা যেন ভুলে না যাই, নিজের ইচ্ছায় তাঁরা হিজড়া হয়ে জন্ম নেননি। মা-বাবার অন্য সন্তানেরা যে সুযোগ-সুবিধা কিংবা উত্তরাধিকারের অধিকার ভোগ করেন, হিজড়া সন্তানদের বেলায় তা অনুপস্থিত। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা যাতে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। তার মানে, সরকারপ্রধানও বিষয়টি অবগত এবং তাঁর এই নির্দেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়ে হিজড়াদের উত্তরাধিকারসূত্রে জমিজমা ও সম্পদপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।