জাদুকাটা নদীপারের শিমুলবন

বাস হেলেদুলে সুনামগঞ্জে পৌঁছাল সকাল ১০টায়। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল আরও আগে। ১৭ ফেব্রুয়ারি কাকডাকা ভোরে সুনামগঞ্জের বাস ধরেছিলাম সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে। গন্তব্য তাহিরপুরের শিমুলবন। ফেসবুকেই জেনেছিলাম শিমুলবনের খোঁজ। সারি সারি শিমুলগাছে ফুটে আছে লাল ফুল। পর্যটক ধ্রুব এসে বললেন, ‘চলুন, ঘুরে আসি।’ সুহৃদ তানভীর চৌধুরীও সাহস দিেলন। শুরু হলো যাত্রা।
সুনামগঞ্জ শহরের নতুন ব্রিজ থেকে হিউম্যান হলার বা মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় তাহিরপুর উপজেলার লাউরের গড়ে। আমরা সবাই একসঙ্গে মজা করতে করতে যাব, এই চিন্তায় হিউম্যান হলারে উঠলাম। গ্রামের ধূলিময় রাস্তা, দম বন্ধ হয়ে আসে। তবু চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আমরা থ।

ফুটে থাকা লাল টকটকে শিমুল ফুল
ফুটে থাকা লাল টকটকে শিমুল ফুল

ওই দেখা যায় শিমুলবন
গাড়ি চলছে। লাউরের গড় বিজিবি ক্যােম্পর কাছে আসতেই দূরে দেখা গেল লাল টকটকে শিমুলবন। যেন আগুন লেগেছে সে বনে। তবে তখনো পথ বেশ দূরের। আমাদের পাড়ি দিতে হবে জাদুকাটা নদী। নদীতে পানি নেই, যতদূর চোখ যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদ। নেমে পড়লাম দুর্গম পথে। নদীর ওপাশেই সবুজ বারিক টিলা। তারপর কুয়াশায় মোড়ানো মেঘালয় পাহাড়। বর্ষার দিনে সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে এই নীল নদীটি বয়ে যায়। জাদুময় জাদুকাটা নদী দেখতে পর্যটকেরা তখন ভিড় করেন। তবে ফাল্গুন মাসে নদীর তলঘেঁষে প্রায় এক মাইল হেঁটে আমরা পৌঁছালাম শিমুলবনে। লাখ লাখ শিমুল ফুল দেখে মনটাই জুড়িয়ে গেল!

মন মাতাল, প্রাণ জুড়াল
এত লাল ফুল আমরা কেউ কখনো দেখিনি। জনমানবহীন চারদিকে শুধু পাখির কলকাকলি। দুপুর রোদে যেন মরীচিকায় ঢুকেছি। বাসন্তী হাওয়ায় জুড়িয়ে গেল প্রাণ। গাছ ঘিরে পুড়ে যাওয়া ঘাসে এখানে-সেখানে পড়ে আছে লাল শিমুল ফুল। শিমুলবনের ভেতরেই লেবুর বাগান। আমরা বিশ্রামের জন্য লেবুর বাগানে যাই। লাল বনে এক টুকরো সবুজ পরিবেশটাকে আরও মোহনীয় করে তোলে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। শিমুলবন তার সৌন্দর্য়ের ডালি মেলে ধরে তখন। সোনালি আলোতে লাল টকটকে ফুল এক মোহনীয় আবেশ তৈরি করে। দোয়েল, বুলবুলি, ফিঙে পাখিরা যেন নেচে ওঠে। এ ডাল থেকে ও ডাল মধু খুঁজে বেড়ায় ভ্রমররা। রবীন্দ্রনাথ যেন এখানে
বসেই লিখেছিলেন, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’

প্রকৃতিপ্রেমী তরু​েণরা এখন দলেবলে ছুটে যান শিমুলবনে
প্রকৃতিপ্রেমী তরু​েণরা এখন দলেবলে ছুটে যান শিমুলবনে

শিমুলবনের কথা
১৫ বছর আগের কথা। বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমি বেছে নিলেন শিমুলগাছ লাগাবেন বলে। সে জমিতে তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুলগাছ লাগালেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুলগাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। বাগানে আসা লাউরের গড় গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিনের কাছেই শোনা গেল এই গল্প।