ভাঙাঘর মেরামত করা হলো না রাজীবের

আবদুল করিম রাজীব
আবদুল করিম রাজীব

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী বাজার এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশে ছোট্ট ভাঙাচোরা ঘরে জন্মেছিল আবদুল করিম রাজীব। জন্মের দুই বছর না যেতেই বাবা নূর ইসলাম মারা যান। রেখে যান রাজীবসহ চার সন্তান। রাজীব চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারটি সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন রাজীবের মায়ের চাচাতো ভাই মফিজুর রহমান। ১৬ বছর ধরে এই ভাইয়ের আশ্রয়ে থেকেই দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দুই ছেলেকে বড় করছিলেন মা মহিমা বেগম।

হাতিয়ার এই বাড়িটি মেরামতের স্বপ্ন দেখেছিল রাজীব
হাতিয়ার এই বাড়িটি মেরামতের স্বপ্ন দেখেছিল রাজীব

রাজীবের মামা মফিজুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি নূর ইসলাম বেড়িবাঁধের পাশে চা দোকানের আয়ে সংসার চালাতেন। জমিজমা বলতে কিছুই তাঁর ছিল না। বেড়িবাঁধের পাশে বাড়ি করে বসতি গড়েন। ২০০২ সালে তিনি মারা যান। তাঁদের ঘরটিও ভাঙাচোরা। তাই পরিবারকে রক্ষা করতে তিনি তাঁদের হাতিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেহানিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন বোন ও তাঁর চার সন্তানকে। ভাঙাচোরা ঘরটি এখনো বেড়িবাঁধের পাশে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

মফিজুর রহমানরা চেষ্টা করে বোনের দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। বড় ভাগনে রাজীব হাতিয়ার মফিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এরপর তিনি তাঁদের ঢাকার আশকোনার বাসায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে রাজীবকে আশকোনা হাজিক্যাম্প এলাকার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। ২০১৭ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ভালো ফল করায় সে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। রাজীবের পাশাপাশি তার ছোট ভাই মো. আল আমিন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

রাজীব যেখানে চিরঘুমে
রাজীব যেখানে চিরঘুমে

রাজীবের মাসহ সবার আশা ছিল এই দুই ছেলে বড় হয়ে একসময় পরিবারের হাল ধরবে। বেড়িবাঁধের পাশের ভাঙাঘরটি মেরামত করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু তার আগেই ঘাতক বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রাজীবকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। মামার বাড়িতে গত ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় দাফন করা হয় রাজীবকে।