টাকা কেনেন, টাকা বেচেন

টাকা বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ। ছবি: লেখক
টাকা বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ। ছবি: লেখক

ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদের পেশা টাকা কেনাবেচা। পথচলতি মানুষের কাছ থেকে পুরোনো টাকা কেনেন, বিক্রি করেন নতুন টাকা। এ থেকে পাওয়া আয়ে তাঁর সংসার চলে।

আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে পরিচয় ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতে অর্ধশতাধিক মানুষ এই টাকা কেনাবেচার দোকান পেতে বসেন। সপ্তাহজুড়েই চলে তাঁদের এই কাজ। এই ব্যবসায়ীরাই পরিচয় করিয়ে দেন আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তাঁদের মতে, কালামই প্রথম ঢাকায় টাকা কেনাবেচার পেশা শুরু করেন।

আজাদের সঙ্গে তাঁর টাকার দোকানে বসেই আলাপ। বললেন, ‘আমিই প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেছি, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে এখন যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম। বাবার হাত ধরে আমার এই পেশায় আসা। ১৯৭২ সালের দিকে ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে তখনকার স্টেট ব্যাংকের কার্যালয় ছিল। বাবা এই ব্যাংক থেকে নতুন টাকা এনে পার্কের পাশের ফুটপাতে বিক্রি করতেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। আমি তখন টাঙ্গাইলের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে পড়া বাদ দিয়ে ঢাকায় আসি। বাবার সঙ্গে টাকা কেনাবেচার কাজ করি।’

কী সে কৌশল? আজাদ বলেন, প্রথমে মানুষের কাছ থেকে পুরোনো টাকা কেনা হয়। কেউ ১০ টাকার পুরোনো নোট ৮-৯ টাকায় বিক্রি করে। পরে সেই পুরোনো টাকা ব্যাংকে দিলে একই মূল্যে ব্যাংক নতুন টাকা দেয়। আমরা আবার সেই নতুন টাকা বিক্রি করি। ১০ থেকে হাজার টাকার নোট বান্ডিল করে বিক্রি করা হয়। কোনো বান্ডিলে নতুন ১০ হাজার টাকা থাকলে গ্রাহক পুরোনো টাকা দিয়ে এটা কেনেন। বান্ডিলের ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক হওয়ার পর আজাদের ব্যবসাও চলে আসে মতিঝিল এলাকায়। সেখানে বসার জায়গা না পাওয়ায় নতুন করে ব্যবসা শুরু হয় গুলিস্তানে। নিয়ে নেন মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স। আজাদের হাত ধরে এই পেশায় যোগ দেন আরও কয়েকজন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই ফুটপাতে ছোট টেবিলের ওপর টাকা বিছিয়ে চলে তাঁদের ব্যবসা। বছরের দুই ঈদে টাকা কেনাবেচা বেশি হয়। অনেকে সালামি দেওয়ার জন্য নতুন টাকা কেনে। এ ছাড়া বিয়ে উপলক্ষেও টাকা কিনতে আসে অনেকে। ‘প্রথম দিকে দুইটা দোকান ছিল গুলিস্তানে। এরপর একে একে বাড়ছে। শুরুতে ৮-১০ হাজার পুরোনো টাকা কিনতাম। নতুন টাকা বিক্রি করে দিনে ৫০০ টাকা আয় হতো। এখন দিনে আয় হাজার টাকা।’ বলছিলেন আজাদ।