সাদকে চেনেন?

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ছবি: সংগৃহীত
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ছবি: সংগৃহীত

অচেনা এক তরুণকে সবাই হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে—
তুমি সাদকে চেনো?
কোন সাদ?
লাইভ ফ্রম ঢাকার আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ।

২০১৬ সালে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র লাইভ ফ্রম ঢাকার জন্য ২৭তম সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সেরা পরিচালক হিসেবে সিলভার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড অর্জনের সময় বাংলাদেশি চলচ্চিত্রপ্রেমী, চলচ্চিত্রকর্মীদের মধ্যে অচেনা এই মেধাবী তরুণকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল।

কে সে? কারও কাছেই সাদের বেশি তথ্য নেই। বিশ্বের বাঘা বাঘা চলচ্চিত্রনির্মাতাদের টপকে এই অচেনা সাদ বাংলাদেশের জন্য অর্জন করলেন অনন্য গৌরব। সবাই তাঁকে একটু চিনতে চায়। একটু জানতে চায় এই মেধাবী তরুণের কলাকৌশল, চিন্তার স্তর।

না, কোনো সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকার, টিভির টক শো—কোনো কিছুতেই তাঁর উপস্থিতি নেই। প্রচারবিমুখ এই মেধাবী তরুণ নীরবে কাজ করে চলেন। বিশ্বের বড় উৎসবগুলোতে অফিশিয়াল সিলেকশন আসতে থাকে লাইভ ফ্রম ঢাকার, সাদের সম্পর্কে কৌতূহল বাড়তে থাকে দর্শক আর নির্মাতাদের।

লাইভ ফ্রম ঢাকা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকি আমরা। ট্রেলার আমাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। সাদাকালো ছবিতে সত্য সুন্দর শক্তিশালী উপস্থাপনা। ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ট্রেলার সাদের নির্মাণশৈলীর আভাস দেয় বেশ পোক্তভাবে।

জানা যায়, স্বল্প বাজেটে নির্মিত হয়েছে অসাধারণ এই ইনডিপেনডেন্ট চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রনির্মাতাদের মধ্যে যখন বাজেট নিয়ে হতাশা, কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে আহাজারি, তখনই এই মেধাবী তরুণ হা–হুতাশকে থোড়াই কেয়ার করে বানিয়ে ফেললেন প্রথম চলচ্চিত্রটি।

নিজেকে জাহির করার ব্যাপারে নির্লোভ এই মেধাবী তরুণ। নীরবে ঘটিয়ে ফেললেন বিপ্লব।

হাতে যতটুকু সাধ্য আছে, যতটুকু কারিগরি সহায়তা আছে, শিল্পী, ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি আর তাঁর নিজের গড়া দল খেলনা ছবির অক্লান্ত পরিশ্রমে সততার সঙ্গে বলে দিলেন নিজের বিশ্বাস করা গল্পটি।

সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার, অভিনেতা মোস্তফা মনোয়ারের সেরা অভিনেতা পুরস্কার, বেস্ট এশিয়ান ফিচার ফিল্মের নমিনেশন এবং রটারডাম, জঞ্জু সাউথ কোরিয়া, সিনেউরোপা সান্তিয়াগো, কেরালাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিশিয়াল সিলেকশনের অর্জনগুলোর মাধ্যমে নবীন নির্মাতাদের অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে উঠলেন সাদ।

সিনেমাটি দেশে মুক্তির প্রতীক্ষায় সবাই যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন নীরবে সাদ পরের সিনেমা বানানোর প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন। আর এরই মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে।

সম্প্রতি ঢাকায় মুক্তি পেল লাইভ ফ্রম ঢাকা। মুগ্ধ দর্শক, মুগ্ধ সিনেমা সমালোচকেরা। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা মেধাবী এই তরুণ চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা শুরু করেন। কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়ে হাত পাকিয়ে ২০১২ সালে দেশ টিভির জন্য একটি অপ্রকাশিত কবিতা নামের ফিকশন নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। এ ছাড়া ওয়াহিদ তারেকের ছবি আলগা নোঙ্গর–এর চিত্রনাট্য লিখেছেন।

আলাপচারিতায় সাদ আমাকে বলেন, ‘অনেকেই হয়তো আমাকে ভুল বোঝেন, কিন্তু আমাকে নিয়ে মাতামাতিটা আমার আন–ইজি লাগে, বিব্রত হই।’ যখন সাদ শুনলেন ছুটির দিনের সেরা তরুণ নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে লেখার দায়িত্ব আমার ওপরে পড়েছে, তখন বিনয়ের সঙ্গে জবাব দেন, ‘আপনি আমাকে নিয়ে লিখবেন, সেটা আমার জন্য বেশ সম্মানের’। বুঝতে পারি বিনয়ী, স্পষ্টভাষী এই তরুণ নিজের মতো নীরবে নিজের কাজটি করে যেতে চান শুধু সততার সঙ্গে।

নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেলনা ছবি থেকে বিজ্ঞাপনচিত্র বানান নিয়মিত। এখন কাজ করছেন তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র আই সি ওয়েভস নিয়ে।

বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনা একের পর এক সম্মানজনক অর্জন অব্যাহত থাকুক তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। শুভকামনা সাদ।

রেদওয়ান রনি: চলচ্চিত্রনির্মাতা