জার্মানিতে 'বাংলার প্রবাহ'

সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ঘুরে এখন জার্মানিতে ‘বেঙ্গল স্ট্রিম’। ৬ জুন থেকে প্রদর্শনীটি চলছে ফ্রাঙ্কফুর্টের জার্মান আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে।  ছবি: সংগৃহীত
সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ঘুরে এখন জার্মানিতে ‘বেঙ্গল স্ট্রিম’। ৬ জুন থেকে প্রদর্শনীটি চলছে ফ্রাঙ্কফুর্টের জার্মান আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বছর দেড় আগে ইউরোপজুড়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের স্থাপত্যকলার প্রদর্শনী ‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্র্যান্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’। সুইজারল্যান্ডের পর ফ্রান্স ঘুরে এখন জার্মানিতে পৌঁছেছে প্রদর্শনীটি। ৬ জুন থেকে জার্মান আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে প্রদর্শনীটি চলছে। চলবে প্রায় সাড়ে চার মাস, ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।

সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড সেটেলমেন্টস। জার্মানির পর প্রদর্শনীটি যাবে যুক্তরাজ্য, গ্রিস ও যুক্তরাষ্ট্রে। সব শেষে প্রদর্শনীটি আসবে বাংলাদেশে।

বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল‍্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টসের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ বলেন, ‘ইউরোপে প্রদর্শনীটি অনেক সাড়া ফেলেছে। এখন এটা আমেরিকাতেও নিয়ে যাওয়ার কথাবার্তা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা, আগামী বছরের শেষের দিকে প্রদর্শনীটি ঢাকায় নিয়ে আসার।’

প্রদর্শনীর পাশাপাশি একই নামে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই। সেটির কাটতিও বেশ ভালো বললেন কাজী খালিদ আশরাফ।

প্রদর্শনীর জন্য ৩০ জন বাংলাদেশি স্থপতির প্রায় ৬০টি কাজ বাছাই করেছে সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম। সুইজারল্যান্ডের স্থপতি নিকলাস গ্রাবার কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন।

মাইন নদীর ধারে অবস্থিত জার্মান আর্কিটেকচার মিউজিয়ামের কাছাকাছি রয়েছে আরও বেশ কিছু জাদুঘর। বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহীদ জানান, ছুটির দিন বাদেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে প্রচুর দর্শক ঘুরতে আসেন এই জাদুঘরপাড়ায়।

প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক স্থাপত্যকে তুলে ধরা। ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে আছে বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের পথিকৃৎ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই কান, পল রুডলফ, স্ট্যানলি টাইগারম্যান, কনস্তানতিনোস দক্সিয়াদিস, রবার্ট বোয়ি, রিচার্ড নয়ট্রা, রিচার্ড ভ্রুম্যানদের কাজ।

প্রদর্শনীতে বাংলার আদি চালাঘরের মডেল। ইংরেজরা এ থেকেই আধুনিক ‘বাংলো’ বাড়ির ধারণা পেয়েছিল।
প্রদর্শনীতে বাংলার আদি চালাঘরের মডেল। ইংরেজরা এ থেকেই আধুনিক ‘বাংলো’ বাড়ির ধারণা পেয়েছিল।

সমকালীন স্থাপত্য হিসেবে প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বশিরুল হক, সামসুল ওয়ারেস, নাহাস আহমেদ খলিল, সাইফ উল হক, জালাল আহমেদ, রফিক আজম, এহসান খান, সালাউদ্দিন আহমেদ, মেরিনা তাবাশ্যুম, কাশেফ মাহবুব চৌধুরীসহ আরও অনেকের কাজ। প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে কী করে এই সমকালীন বাংলাদেশি স্থপতিরা বিচিত্র পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন। কী করে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ও গ্রামীণ নাজুক পরিবেশে স্থাপত্য তৈরিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন।

এই প্রদর্শনী প্রথমে হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে, ২ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ১৬ জুন ২০১৮ পর্যন্ত। এরপর ফ্রান্সের আর্ক অঁ রিভ জাদুঘরে প্রদর্শনীটি হয় ২২ নভেম্বর ২০১৮ থেকে ৩ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত।

জার্মানিতে প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল বাংলাদেশি স্থপতিদের বক্তৃতা অনুষ্ঠান। গত ১২ জুন কাজী খালিদ আশরাফ ও মেরিনা তাবাশ্যুম অংশ নেন ‘সাংস্কৃতিক পরিবর্তন’ শীর্ষক সভায়। ২৬ জুন ‘সামাজিক পরিবর্তন’ সভায় ছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ, নাহাস আহমেদ খলিল। ২১ আগস্ট ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ সভায় ছিলেন সাইফ উল হক।

এ ছাড়া গত ২৮ আগস্ট অ্যাডাম দৌলার বৈষম্য চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়।১৮ সেপ্টেম্বর দেখানো হবে শাহীন দিল-রিয়াজের ব্যাম্বু স্টোরিজ। আছে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য দর্শনার্থীদের জন্য ট্যুর।