অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টের অন্য চ্যালেঞ্জ

অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট
অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট

অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট বিশ্বনন্দিত হয়ে আছেন মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, ১৯৩২ সালে প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে একাকী আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর উড়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, তাঁর অন্তর্ধান রহস্য। তবে আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি তিনি গ্রহণ করেছিলেন এক অনন্য চ্যালেঞ্জ।

 ১৯৩৫ সালের কথা। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমির সঙ্গে আসা–যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। এই অবস্থায় ব্যবসা বাড়াতে আমেরিকা থেকে ইউরোপের দূরত্বের প্রায় সমান দূরত্বে অবস্থিত এই দ্বীপ থেকে উড়োজাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ১০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একদল ব্যবসায়ী।

১৯৩৫ সালের ১১ জানুয়ারি চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু থেকে রওনা দেন তিনি। একদম একা। সকাল থেকেই ছিল প্রচণ্ড বৃষ্টি। কিন্তু আবহাওয়া তাঁকে দমাতে পারেনি। পাক্কা ১৮ ঘণ্টার যাত্রা শেষে তিনি পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড বিমানবন্দরে।

নিজের সেই উড়ালের অভিজ্ঞতা তিনি লিখে রেখে গেছেন সে বছরের মে মাসে প্রকাশিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীতে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর থেকে উড়ে যাওয়ার রাতটা ছিল তারায় ভরা। মনে হচ্ছিল, সমুদ্র থেকে উঠে আসা একঝাঁক তারা আমার ককপিটের জানালার ঠিক বাইরেই আমাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।’

মার্কিন নাগরিক ইয়ারহার্টের উড়োজাহাজে উড়াল দেওয়ার শখটা অবশ্য আরও আগের। যেমনটি শুরুতেই বলা হয়েছে। ১৯২৮ সালে তিন সদস্যের বৈমানিক দলের একজন হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৩২ সালে প্রথম নারী পাইলট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজে করে আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পারে আয়ারল্যান্ডের লন্ডনডেরিতে গিয়ে পৌঁছান। এই কৃতিত্বের জন্য তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ডিস্টিংগুইশড ফ্লাইং ক্রস পদকে ভূষিত করা হয়েছিল।

১৯৩৭ সালের ২ জুলাই ইয়ারহার্ট বিশ্বভ্রমণে বের হন। সঙ্গী ছিলেন নাবিক ফ্রেড নুনান। প্রাথমিকভাবে নিউগিনি থেকে হাউল্যান্ড দ্বীপের দিকে উড়োজাহাজ নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপে যাওয়ার পথেই হারিয়ে যায় উড়োজাহাজটি। যে নৌযান ইয়ারহার্টের উড়োজাহাজটিকে হাউল্যান্ড দ্বীপের দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল, ওই নৌযানের সঙ্গে ইয়ারহার্টের উড়োজাহাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এরপর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট ও ফ্রেড নুনানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। উড়োজাহাজের কোনো ধ্বংসাবশেষও মেলেনি। এমনকি আজ পর্যন্ত জানা যায়নি, ইয়ারহার্টের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছিল।

হিস্ট্রি ডট কম ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অবলম্বনে আকিব মো. সাতিল