মেয়েদের ভ্রমণের ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে চাই

‘এসকাপেড ২০১৯’ অায়োজনে ওয়ান্ডার উইমেনের কয়েকজন সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
‘এসকাপেড ২০১৯’ অায়োজনে ওয়ান্ডার উইমেনের কয়েকজন সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
>সাবিরা মেহেরিন। ফেসবুকভিত্তিক নারী ভ্রমণকারীদের সংগঠন ওয়ান্ডার উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা। দেশ ও বিদেশে ভ্রমণ আয়োজন ছাড়াও বাংলাদেশি নারীদের ভ্রমণসহায়ক তথ্য দিয়ে পাশে থাকে সংগঠনটি। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হলো সংগঠনটির বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘এসকাপেড ২০১৯’। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সজীব মিয়া
মালয়েশিয়ায় সাবিরা মেহেরিন
মালয়েশিয়ায় সাবিরা মেহেরিন

কেন ওয়ান্ডার উইমেন?
সাবিরা মেহেরিন
: দেশ বা দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে গেলে দেখা যায়, খুঁটিনাটি অনেক কিছু আমাদের অজানা, যে কারণে বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়। আবার ইন্টারনেট ঘেঁটে হয়তো কিছু তথ্য পাওয়া যায়, কিন্তু তা অনেক সময় বাংলাদেশি নারীদের ভ্রমণের উপযোগী নয়। নতুন কোনো গন্তব্যে গিয়ে নারীরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারে, সেই ভাবনা থেকেই ওয়ান্ডার উইমেনের যাত্রা। তবে এর প্রেক্ষাপট আরেকটু গভীরে!

সেই গভীরের কথা জানতে চাই...
সাবিরা: আমার মা জুবাইদা নাজ শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। সমাজের অগ্রসর পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁর। কিন্তু প্রায়ই বলতে শুনতাম, তাঁর স্বপ্ন দেশের বাইরে একবার ঘুরতে যাওয়া। সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। আমি নিজেও একবার এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম, সেটা ২০১৫ সালে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষার্থী হিসেবে একটি ব্যবসায়িক ধারণা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাই। আমি ছিলাম দলনেতা। কিন্তু পরিবার থেকে সংশয় ছিল, একা একজন মেয়ে কীভাবে এত দূর যাবে! শেষমেশ যাওয়া হয়নি। মায়ের অপূর্ণ ইচ্ছা আর আমার নিজের সেই অভিজ্ঞতা মনের ভেতর দাগ কেটেছিল।

এরপর তো একা অনেক দেশে ঘুরেছেন?
সাবিরা: এরপর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। সেসব প্রতিযোগিতায় আয়োজকদের তত্ত্বাবধানে যেতাম। কিন্তু একাকী ভ্রমণে গিয়ে বুঝলাম, বাসায় বসে যে ভ্রমণের পরিকল্পনা করি, তার সঙ্গে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৭ সালে ওয়ান্ডার উইমেনের যাত্রা শুরু। সুপার হিরো চরিত্র পছন্দ বলেই ‘ওয়ান্ডার উইমেন’ নামটা বেছে নেওয়া। 

ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনার অভিজ্ঞতা কেমন?
সাবিরা: মিশ্র! আমাদের গ্রুপে এখন প্রায় ১৫ হাজার নারী সদস্য। যাচাই–বাছাই করেই গ্রুপে নতুন সদস্য যুক্ত করা হয়। যদিও শুরুটা আমার পরিচিত কয়েকজন মানুষকে নিয়েই হয়েছিল। তখন আমরা বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে গিয়ে যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতাম, সেসব অভিজ্ঞতাই লিখতাম। দিনে দিনে এখন নানা বিষয়ে আলোচনা হয়, পরামর্শ ও সহযোগিতাও করে ওয়ান্ডার উইমেন।

‘এসকাপেড ২০১৯’ সম্পর্কে কিছু বলুন...
সাবিরা: এটা আমাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম। প্রতিবছর ঢাকার আশপাশে কোথাও একত্র হই। দিনভর নানা আয়োজন থাকে, থাকে অনুকরণীয় কোনো ভ্রমণকারী নারীর বক্তব্য। এবার আমাদের আয়োজন ছিল ১৩ ডিসেম্বর। ১৫০ জন সদস্য অংশ নিয়েছিল। 

শুনেছি, আপনি কোন দেশে থাকেন, তা নিয়ে আপনার পরিচিত মানুষেরাও দ্বিধায় পড়ে যান!
সাবিরা:
(হাসি) প্রায়ই ভ্রমণে বের হতাম বলেই পরিচিতজনেরা এমন মনে করেন। এত দিন চাকরির সূত্রে আমি মালয়েশিয়ায় ছিলাম। একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সে দেশীয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছি। এখন নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ঢাকাতেই আছি।

ওয়ান্ডার উইমেন নিয়ে আর কী কী পরিকল্পনা আছে?
সাবিরা: আমরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আয়োজন করেছি, দেশের প্রচলিত ভ্রমণ স্থানগুলোতেও মেয়েদের নিয়ে ঘুরে এসেছি। এর মাধ্যমে প্রায় এক হাজার নারী ভ্রমণ করেছে। আমাদের লক্ষ্য নারীদের ভ্রমণের ইচ্ছে জাগিয়ে তোলা। সামাজিক নানা কারণে আমরা মেয়েরা আসলে সেই ইচ্ছেটাই করতে পারি না। ওয়ান্ডার উইমেন মেয়েদের সেই সাহসের জায়গাটা তৈরি করে দিতে চায়।