বয়স ২৮, জন্মদিন ৭

মানসুরা চৌধুরী
মানসুরা চৌধুরী

পরিবারে আমি দ্বিতীয় সন্তান। আমার বড় একজন ভাই। ছোট বলেই শৈশব থেকে সবার আদরে বড় হয়েছি। কিন্তু একটা বিষয় মনের মধ্যে খুব প্রশ্ন জাগাত, যখন আমার মা-বাবা আমার ভাইয়ার জন্মদিন প্রতিবছর উদ্‌যাপন করতেন। ভাবতাম, ভাইয়া আমার আগে থেকে তাঁদের কাছে এসেছে বলেই হয়তো আমার চেয়ে বেশি পছন্দ করেন! বড় হতে হতে অবশ্য সেই ভুল ভাঙতে শুরু করেছিল।

ছোটবেলার একটা ঘটনা। ভাইয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। বাসার ভাড়াটিয়া চাচা আমার ডাকনাম ধরে সবার সামনে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি বিদুষী, তোমার আব্বু-আম্মু তোমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করেনি কেন এ বছর?’ আমি খুব কষ্ট পেলাম প্রশ্ন শুনে। কিন্তু বুঝতে না দিয়ে উত্তরে বলেছিলাম, ‘আম্মু বলেছেন আমার জন্মদিন প্রতিবছর আসে না। চার বছর পরপর আসে। আমি খুব বিশেষ তো তাই।’

এসব স্মৃতি মনে করে হাসি এখন। আসলে ভাবতে খুব ভালো লাগে যখন বয়স ২৮, কিন্তু জন্মদিন ৭ম!

আমার প্রথম ও দ্বিতীয় জন্মদিনের কথা মনে নেই বললেই চলে। তবে মা-বাবা অ্যালবামে ছবি দেখিয়ে অনেক কাহিনিই বলতেন। ২০০৪ সালে আমার তৃতীয় জন্মদিনের কথা মনে আছে। তখন আমার বয়স ১২। ছোটবেলা থেকেই আমার মা-বাবা আমাকে আর আমার ভাইকে নাচ-গান শিখিয়েছিলেন। তাই অনেক সময় নাচের পোশাক হিসেবে শাড়িও পরতে হতো আমাকে। সাদা আমার খুবই পছন্দের রং। তাই মা আমাকে সাদার মধ্যে সবুজ পাড়ের একটি শাড়ি নিজ হাতে বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমার মনে আছে, আমি ওই শাড়ি পরে, মাথায় গোলাপ ফুল নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। তারপর বিকেলে আমার সব আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে খুব ধুমধাম করে কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলাম।

২০১৬ সালে আমার ষষ্ঠ জন্মদিন উদ্‌যাপন হয়। তখন আমি বিদেশে ছিলাম। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা সামনে বলে আমি দেশে ফেরার দুঃসাহস করিনি। সেবার আমার বিদেশি বন্ধুরা সুযোগ পেয়েছিল আমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করার। আমার উদ্‌যাপন করা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়ভাবে এবং আনন্দদায়ক জন্মদিন কখনো হয়নি। সেদিন সকালে, বিকেলে ও রাতে তিনটি জায়গায় আমি আমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলাম। দিনটি যেন শেষই হচ্ছিল না। এবার আমার সপ্তম জন্মদিন। পেশায় আমি একজন চিকিৎসক বলে নিজেকে এবং পরিবারকে সময় খুব কমই দিতে পারি। তাই আমি আশা করছি আমার এবার এবং আগামী প্রতিটি জন্মদিনই শত ব্যস্ততার মধ্যেও আনন্দের হবে। আমার জন্য মানবসেবাই সবচেয়ে বড় উপহার।