করোনায় মাছেদের ফিরে আসা

‘আমি আশা করছি, আমরা এই ভয়াবহ দুঃসময় থেকে শিক্ষা নেব। যখন এই দুঃসময় কেটে যাবে, আমরা জনসমাগম, পরিবেশদূষণ এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারব।’ ইতালির ভেনিসের অধিবাসী একজন ব্যাংক কর্মকর্তার বক্তব্য এটি। শুধু তিনিই নন, অসংখ্য ভেনিসবাসী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেছেন। মার্কো কাপুভিল্যা নামের একজন তো রীতিমতো কোয়ারেন্টিনকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ কোয়ারেন্টিন, তোমার জন্য আমরা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা উপভোগ করছি।’ সত্যিই ব্যাপারটি এমন ঘটেছে। সম্প্রতি করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী তার ভয়াল রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতালি ইতিমধ্যে ইউরোপে করোনাভাইরাসের উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষও করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক লড়াই শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশটিকে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অন্যতম জনবহুল শহর ভেনিস একেবারে জনশূন্য হয়ে গেছে। বছরজুড়ে পর্যটক এবং স্থানীয়দের উপচে পড়া উপস্থিতি শহর এবং বিশেষত শহরটির খালগুলোকে করে তুলেছিল নোংরা-আবর্জনাপূর্ণ। পর্যটকদের ছুড়ে ফেলা উচ্ছিষ্ট খাবার এবং বিরামহীন নৌযান চলাচল খালের পানিকে দূষিত করে ফেলেছিল। পানির যথাযথ গুণাগুণ নষ্ট হওয়াসহ নাইট্রোজেন অক্সাইডের ভারসাম্যহীনতায় মাছসহ অন্য জলজ প্রাণীদের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অথচ একসময় মাছের অভয়ারণ্য ছিল এই খালগুলো। দৃষ্টিনন্দন রাজহাঁসগুলো দল বেঁধে সাঁতার কাটত। স্বচ্ছ জলে ডলফিনের খেলা ছিল দেখার মতো দৃশ্য। খালের অগভীর জলে ডুবসাঁতারে দারুণ সময় কাটাতেন ভেনিসবাসীও। 

কিন্তু একপর্যায়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সবই। সম্প্রতি করোনার জন্য ঘোষিত লকডাউনের ফলে জনশূন্য হয়ে যায় খাল–তীরবর্তী পর্যটন অঞ্চল। ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করেছে। জলের বুক চিরে গন্ডোলা (ইতালির ঐতিহ্যবাহী নৌকাবিশেষ) ঘুরে বেড়াচ্ছে না যত্রতত্র। ছুড়ে ফেলা হচ্ছে না পানিদূষণকারী বস্তু। কমে গেছে দূষণ। ফলে ধীরে ধীরে স্বচ্ছতা ফিরে পেতে শুরু করেছে অস্বচ্ছ জল। ফিরতে শুরু করেছে মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। মাছ-ডলফিনের চলাচল স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে স্বচ্ছ জলের নিচে। আবারও সার বেঁধে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল। আর এখানেই করোনা কিংবা কোয়ারেন্টিন থেকে ইতিবাচক শিক্ষা নেওয়ার কথা উঠে এসেছে সচেতন ভেনিসবাসীর বক্তব্যে। 

সূত্র: ডেইলি মেইল