ভাইরাস ভয় পাইয়ে দেয়

এই যে চীনের এক শহরে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি দ্রুত বিস্তৃত হলো পুরো দুনিয়ায়, তা কেন হলো? অদেখা এক ভাইরাসের ভয়ে এই যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল সারা দুনিয়া, অসংখ্য মানুষ গৃহবন্দী, মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, ভাইরাস কি তবে যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ? এসব প্রশ্নের উত্তর থাকছে এ আয়োজনে।

বিশ্বায়নকালের মহামারি
বিশ্বায়নকালের মহামারি

বিশ্বায়নকালের মহামারি

যুগে যুগে অনেক মহামারির সাক্ষী হয়েছে দুনিয়ার মানুষ। ভুগেছেও নিরন্তর। অতীতে এমন অনেক মহামারির কথা জানা যায়, যেগুলো কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের মানুষকে আক্রান্ত করলেও বিশ্বের অন্যান্য অংশে প্রভাব ছড়িয়ে পড়ত ধীরে ধীরে। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে মানুষের যাতায়াত অবারিত বলেই মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের প্রকোপ। যেমনটি হয়েছে করোনাভাইরাসের বেলাতেও। চীনের উহান থেকে যা পৌঁছে গেছে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশে।

যুদ্ধ হেরেছে মহামারির কাছে
যুদ্ধ হেরেছে মহামারির কাছে

যুদ্ধ হেরেছে মহামারির কাছে

যুদ্ধ মানেই হানাহানি, প্রাণহানি। তবে যুদ্ধের চেয়েও বেশি মানুষের প্রাণ যায় ভাইরাসঘটিত রোগে। চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে মহামারিতে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাওয়ার ঘটনা কমে এলেও প্রতিবছর যে সংখ্যক মানুষ মারা যায়, তা যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যার চেয়েও বেশি। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জাতে প্রতিবছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা যায় প্রায় এক লাখ মানুষ। এইডসের কারণে এখন পর্যন্ত মারা গেছে চার কোটি মানুষ। জাস্টিনিয়ান প্লেগে কয়েক শতাব্দীজুড়ে মারা গেছে শত কোটি মানুষ। স্প্যানিশ ফ্লুতে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মারা গেছেঅসংখ্য মানুষ। সেই হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে চার বছরে প্রাণ দিতে হয়েছিল চার কোটি মানুষের।

ভাইরাসের বল জুগিয়েছে প্রতিষেধক
ভাইরাসের বল জুগিয়েছে প্রতিষেধক

ভাইরাসের বল জুগিয়েছে প্রতিষেধক

প্রতিষেধক হলো মূলত কোনো রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা। প্রতিষেধকের মাধ্যমে শরীরে মূলত কোনো রোগের জীবাণুর মতো অংশ প্রবেশ করিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার সঙ্গে সেটিকে পরিচিত করিয়ে দেওয়া হয়, যেন ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু এ প্রতিষেধকের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে প্রতিষেধকের কারণে অনেক ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। খামারগুলোতে এ প্রতিষেধক যেসব প্রাণী বা পশুর দেহে প্রবেশ করানো হচ্ছে, সেই প্রাণী বা পশুর রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে একই সঙ্গে।

অজানা জীবাণুর শক্তি
অজানা জীবাণুর শক্তি

অজানা জীবাণুর শক্তি

স্তন্যপায়ী জীবের চেয়েও নাকি মাইক্রোব বা জীবাণু শক্তিশালী। কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে যে পরিমাণ এবং যত বিচিত্র প্রজাতির জীবাণু টিকে আছে, সে সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই কম। বাতাসে, মাটিতে এমনকি সমুদ্রের তলদেশেও বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে এই মাইক্রোবগুলো। সহস্রাধিক প্রজাতির এমনও মাইক্রোব আছে পৃথিবীতে, যেগুলো এখনো মানুষের সংস্পর্শেই আসেনি। এগুলোর মধ্যে কোনটি যে ক্ষতিকর, কোনটি থেকে যে আরও ভয়াবহ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের স্বচ্ছ ধারণাই নেই।

ভাইরাস ঘুরছে চারপাশে
ভাইরাস ঘুরছে চারপাশে

ভাইরাস ঘুরছে চারপাশে

অসংখ্য মানুষের প্রাণ কাড়ে যে রোগ, সাধারণত সেগুলোর কথাই খুব করে মনে রাখে মানুষ। স্প্যানিশ ফ্লু বা প্লেগের কথা যেমন এখনো ঘুরেফিরে আমাদের আলোচনায় আসে। কিন্তু এমনও অনেক রোগ আছে যেগুলোর প্রভাব ও ক্ষতি মহামারির স্বীকৃতি পাওয়া রোগের চেয়েও ক্ষতিকর ছিল। যেমন ইংল্যান্ডে পঞ্চদশ শতাব্দীতে ছড়িয়ে পড়া সুইটিং সিকনেস। তখন রোগাক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাটা ছিল রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো। কিন্তু যেহেতু রোগটি খুব বেশি অঞ্চলে ছড়ায়নি, তাই এটি সম্পর্কে ধারণাও খুব কম। এমনই অনেক রোগ আশপাশেই আছে, তা হয়তো মানুষ জানেও না।

লিস্টভার্স অবলম্বনে আকিব মো. সাতিল