ছেলেবেলোয় ফেরা

নূরুল আমিন
নূরুল আমিন

সত্যি কথা বলতে, করোনার প্রকোপের কারণে ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় শুরুতে খুশিই হয়েছিলাম। যেহেতু প্রস্তুতি খুব একটা ভালো ছিল না, ভাবলাম এবার মন দিয়ে পড়াশোনাটা করা যাবে। কিন্তু যখন আমাদের দেশেও রোগটা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, সবার মতো আমার মধ্যেও ভর করল নানা দুশ্চিন্তা, ভয়। কী হবে দেশের!

নিজেকে ভালো রাখতে, ব্যস্ত রাখতে, অনলাইনে দু-একটা কোর্স করা শুরু করলাম। মাঝেমধ্যে সিনেমা, নাটক দেখতাম। একাডেমিক পড়াশোনা আর এর বাইরের কিছু বইও পড়া শুরু করলাম। একাডেমিক পড়াশোনা করার সময় ক্যাম্পাস, ক্যানটিন, খেলার মাঠ চোখের সামনে ভেসে উঠত। মনে হতো, কবে আবার জীবনটা স্বাভাবিক হবে!

ঘুরেফিরে সিনেমা, নাটক, অনলাইনে কোর্স, পড়ালেখা করে করে কেমন যেন একঘেয়ে লাগত, দুশ্চিন্তা পেয়ে বসতো আরও। তাই এবার আমি আমার ছোট-ছোট ভাগনে-ভাগনিকে আরও বেশি সময় দিতে শুরু করলাম। ঘোড়া হয়ে ওদের পিঠে চড়ানো, গল্প শোনানো আর নানা প্রশ্নের ওলট পালট জবাব দিয়ে সময়টা দারুণ কাটতে লাগল। দেখলাম, ছোটদের সঙ্গে থাকলে মন ভালো থাকে। বিরক্ত লাগে না। মাঝেমধ্যে ওদেরকে নানা-নানী সাজিয়ে আমি নাতি হয়ে যাই, কখনো কখনো এই ‘খুদে মুরব্বী’দের কথায় কান ধরে ওঠবসও করতে হয়! মনে মনে ভাবি, আবার যদি ওদের মতো শৈশবে ফিরে যেতে পারতাম!

লক্ষ্য করে দেখলাম, ছোট বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা খুবই ভালো। ওরা শুধু যে বড়দের কাছ থেকে শেখে তা না, অনেক কিছু শেখায়ও। ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার সব সময় ভালো লাগে। কিন্তু পড়াশোনা, কাজ, যান্ত্রিক জীবনের চাপে সব সময় তো আর সেই সুযোগ হয় না। অথচ ওদের সঙ্গে থাকলে মনটা বেশ ফুরফুরা লাগে। কত যে মজার ঘটনা ঘটে!

আমার চার বছর বয়সী ভাগনে সাফার কথাই বলি। ও বলে, ‘আল্লাহ, তুমি মামাকে তাড়াতাড়ি বড় করে দাও। মামা বড় হয়ে গেলে আমরা একসঙ্গে স্কুলে যাব!’ এই দমবন্ধ দিনগুলোতে ওদের কথা শুনেই আমরা হো হো করে হাসি!

নূরুল আমিন : শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়