পাড়াতো বিয়ে আর কিপ্টে কাকু

আমাদের পাড়ার একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। সেটা বিয়ের আয়োজন নিয়ে। মূলত এই রীতি দেখা যায় বউভাতের দিন।

বউভাতের নিমন্ত্রণে বড়রা খাবার খেতে চেয়ারে বসতে পারলেও ছোটরা তা পারবে না। ছোটরা গিয়ে বসবে আড়াআড়ি বা লম্বালম্বিভাবে কিছু বাঁশ বিছানো থাকত, ওই শক্তপোক্ত বাঁশের ওপর।

আমাদের একটা বিশ্বাস জন্মেছিল, বাঁশের ওপর বসে খেলে খাবারদাবার অল্প করে দেয়। বিশ্বাস যে অমূলক, তা–ও কিন্তু নয়!

কোনো এক দুপুরে পাড়ার বউভাতের নিমন্ত্রণ খেতে বসেছি। সব মিলিয়ে ছোটদের দলে জনা পঞ্চাশেক হবে। মাংস দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে পরিচিত এক কাকুর ওপর। রীতিমতো তিনি ছোটদের কাছে ত্রাস ছিলেন! নিমন্ত্রণের দিন সবাই অবধারিতভাবে কামনা করতাম, আর যাই হোক এই কিপ্টে গোছের কাকু যেন মাংসের বালতিটা বিতরণের জন্য হাতে তুলে না নেন।

সেদিন সবার মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক শুরু হয়ে গেল। কাকু মাংস দিতে দিতে আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। আমার পাশে বসেছিল আমার ছোট ভাই। প্রথমে বালতি থেকে এক টুকরো মাংস উঠিয়ে দিলেন ওর পাতে। আবার আরেক টুকরো দেওয়ার জন্য বালতির ভেতর চামচ দিতেই উঠে এল অনেক মাংস। দেখি, চামচটি ভাইয়ের পাতের ওপর নিয়ে এমন কৌশলে ঝাঁকতে লাগলেন, যেন এক টুকরো মাংসই পড়ে। কিন্তু বিধিবাম, টুপুস করে চামচের সব মাংসই আমার ভাইয়ের থালায় পড়ে গেল। ওদিকে কাকুর মুখ চুপসে গেল যেন! আমাদের সেকি হাসি!

করোনার দিনে ঘরে বসে এসব শৈশব স্মৃতি ভাবি আর হাসি। আহা, সোনালি শৈশব।