বাবা ছোটেন টিকা নিয়ে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার বাবা একজন ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বা টিকাসামগ্রী বহনকারী। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন শুরু হয়। টিকা নিয়ে রোজ সকালে চলে যান উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম কিংবা পাড়ায়।

আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবার তেমন চাওয়া-পাওয়া নেই। সেটা তাঁর চাকরি দেখলেও বোঝা যায়। সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করলেও তাঁর চাকরিটা অস্থায়ী।

বাবা এখনো দায়িত্ব পালন করতে যান। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে থেকে আমরা তাঁকে নিয়ে চিন্তিত। কক্সবাজার জেলায় সরকার দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা আক্রান্ত রোগীর আইসোলেশনের জন্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে বাবা যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন, এটিও তার মধ্যে একটি। ইতিমধ্যে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকজন নার্স আর ল্যাব টেকনেশিয়ান কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেও বাবা কর্মস্থলে যাওয়া বাদ রাখেননি।

গণপরিবহনে বাবা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ছোটেন কর্মস্থলে। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ছুটে চলেছেন অন্যের প্রাণ বাঁচাতে। নিজের ব্যক্তিগত সুরক্ষা বলতে আছে বাজার থেকে চল্লিশ কিংবা পঞ্চাশ টাকা দামের কেনা একটি সাধারণ মানের মাস্ক। আর দুই শ টাকা দিয়ে নেওয়া কয়েক ফোঁটা হ্যান্ডরাব লিকুইট। ব্যস, এতটুকু দিয়েই বাবা তাঁর পেশার প্রতি দিব্যি সম্মান জানিয়ে যাচ্ছেন। তখন এই ভেবে ভালো লাগে যে অন্তত বাবার এই ক্ষুদ্র কাজটুকু দেশের জন্য কিছুটা হলেও মঙ্গল বয়ে আনছে।
শিক্ষার্থী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার।