অকৃত্রিম ভালোবাসা

সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারির বিকেল বেলায় কোথায় যেন যাচ্ছিলাম। চারদিক ফাঁকা। ফাঁকা থাকাই স্বাভাবিক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি চলছে। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি পাওয়া মুশকিল। দেবপাহাড় থেকে রিকশা খুঁজতে খুঁজতে হাঁটা দিলাম। মোড়েই একটা রিকশা পেয়ে গেলাম।
গণি বেকারি পর্যন্ত যাওয়ার পর দেখলাম বয়স্ক রিকশাওয়ালা রিকশা রেখে হঠাৎ পেছনে ফিরে দৌড় দিলেন। আমি পুরো হতভম্ব। পেছনে ফিরে পর্দার ফাঁকে উঁকি দিলাম। দেখলাম, লোকটা এক দৌড়ে রাস্তার মাঝখানে চলে গেলেন। সেখান থেকে কিছু একটা তুলে নিলেন। তারপর আবার এক দৌড়ে ফিরে এলেন। ওনার হাতে বাংলাদেশের একটা পতাকা। উনি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘আফা, রাস্তার ওপরে পতাকাডা পইড়া আছিল, তুইলা আনলাম নইলে কেউ আবার হেইডারে পাড়াইয়া দিব।’ মানুষটি খুব যত্ন করে পতাকাটা থেকে ধুলো ঝেড়ে ভাঁজ করে সিটের পাশে গুঁজে রেখে আবার রিকশা চালাতে শুরু করলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার বাড়ি কোথায়?’
‘বরিশাল’
‘এত দূরে চট্টগ্রাম এলেন কেন?’
‘পেটের দায়ে।’
ততক্ষণে রিকশা গুডস হিলের পাহাড়ে উঠছে।
উনি বলে গেলেন, ‘কত কষ্ট কইরা, যুদ্ধ কইরা দেশডারে স্বাধীন করছি, অহন রিকশা চালাই। জানেন আফা, মুক্তিযোদ্ধা হইয়াও রিকশা চালাইতাছি এটা নিয়া আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি বললাম, ‘আপনারা দেশটার জন্য কষ্ট করেছেন বলেই তো আজকে আমরা এত ভালোভাবে থাকতে পারছি, আপনাদের এই ঋণ আমরা কখনোই শোধ করতে পারব না।’
উনি বললেন, ‘নিশ্চয় পারবেন আমগোর ঋণ শোধ করতে। দেশটারে ঠিকভাবে আগাইয়া নিয়া যাইয়েন, পড়াশোনা করেন অমনেই আমগোর ঋণ শোধ হইব।’
আমি তঁার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
দেবপাহাড়, চট্টগ্রাম।