>
যে উদ্যোগ বদলে দিতে পারে পৃথিবী
আজ ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে। বিশ্বের সামনের সারির ৫৫টি সংবাদপত্র একযোগে পরিবর্তনের কারিগরদের কথা বলছে এই দিনে। এবারও এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে প্রথম আলো। পৃথিবী বদলে দিতে পারে এমন অনন্য কিছু উদ্যোগের গল্প নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। সারা বিশ্ব থেকে বেছে নেওয়া নানামুখী উদ্যোগের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের দুটি উদ্যোগও। আপনি এবং বিশ্বের ১২ কোটি পাঠক একযোগে জানতে পারছেন এই সব অনন্য উদ্যোগের গল্প।
জানুয়ারির শেষ দিককার কথা। লুক্সেমবার্গে আসা আশ্রয়প্রার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি মতবিনিময় সভার উদ্যোগ নেওয়া হলো। উদ্দেশ্য, যাঁরা লুক্সেমবার্গে নতুন এসেছেন, তাঁরা যেন নিজেদের আর বাইরের কেউ মনে করেন। এ জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কী করা যায় তাই নিয়ে ওই সভায় কথাবার্তা হলো। পরের মাসে যা ঘটল তা অভাবনীয়ই বটে।
দাঁড়িয়ে গেল ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরোর একটি তহবিল। তহবিলের টাকা খরচ হলো দুই খাতে। প্রথমত, আশ্রয়প্রার্থীদের লুক্সেমবার্গে সহজে খাপ খাইয়ে নেওয়ায় সহযোগিতা করা। দ্বিতীয়ত, ‘দ্য কানেকশনস’ গড়ে তোলা। ‘দ্য কানেকশনস’ নামের প্রকল্পটির লক্ষ্য শরণার্থীদের তথ্য সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এ কাজে আবার যুক্ত হলো অভিবাসী শ্রমিকদের সংগঠন এএসটিআই।
এর বাইরে আরও বেশ কিছু সংগঠন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনোটি শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ প্রস্তাব করেছে, কোনোটি দিতে চেয়েছে ক্ষুদ্র ঋণ, কোনোটি প্রশিক্ষণ। এমনকি এমবিএ করার সুযোগ পর্যন্ত প্রস্তাব করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আশ্রয়প্রার্থীদের পরামর্শসেবাও দিতে প্রস্তুত।
দ্য কানেকশনস-এর ব্যবস্থাপক মিশেল মোজেস বলছিলেন, ‘এত দিক থেকে এত প্রতিষ্ঠান এত এত সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে আসছিল, আমি রীতিমতো বিস্মিত! আসলে শরণার্থীদের সাহায্য করতে স্থানীয় বাসিন্দারা যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবে এগিয়ে এসেছে। এ বিষয়টা আমাকে ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত করেছে।’
মিশেল শুরু থেকে এই প্রকল্পের সঙ্গে আছেন। এখন প্রকল্পটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তার একজন তিনি।
মিশেল আরও বলেন, ‘আমরা এমন অনেক মানুষ পেয়েছিলাম, যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের কাজ দিতে চেয়েছেন। কেউ কেউ এমনকি নিজের বাসায় থাকার জন্য ঘর ছেড়ে দিতে চেয়েছেন।’
দ্য কানেকশনস প্রকল্পটি শুরু হয় এ বছরের মার্চে। শুধু আশ্রয়প্রার্থীদের নতুন দেশে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিতেই ছয়টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল আশ্রয়প্রার্থীরা যেন নিজের যা প্রয়োজন নিজেই খুঁজে নিতে পারেন। এ ছাড়া ভাষাটা ভালোভাবে রপ্ত হওয়ার জন্য আশ্রয়প্রার্থীদের ভাষা শিক্ষা কোর্সের মতো কোর্সেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। প্রথমে এতে অংশ নেন ৪৪ জন। প্রাথমিক পর্যায়টা উতরে যাওয়ার পর তাঁরা বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাঁদের কেউ কেউ ব্যবসা শুরু করেন। কেউ আবার চাকরিও নেন।
খাপ খাইয়ে নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীরা নির্দেশনা ও পরামর্শ পেয়েছেন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে ওঠার পর এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের পরের পদক্ষেপ কী হবে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেন।
প্রথম কর্মশালায় যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, কিন্তু তাঁদের এই দক্ষতা লুক্সেমবার্গে কীভাবে কাজে লাগাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
জিনা মেনহাল বলছিলেন, ‘ধরুন, এঁদের অনেকেই প্রকৌশলী। কিন্তু লুক্সেমবার্গে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি মেলা এবং তার ভিত্তিতে কাজ পাওয়া কঠিন। অথচ তাঁরা তাঁদের কাজটা বেশ ভালোই জানেন।’ জিনা মেনহাল এই প্রকল্পটির সমন্বয়ক। দ্য কানেকশনস-এর শীর্ষ দুই ব্যক্তির একজন।