মেঘবালিকা

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

আচমকাই বৃষ্টি নামল! টিপ টিপ বৃষ্টি মাথায় করে যাচ্ছিলাম কাঁটাবনের দিকে। চশমার কাচে জমা বিন্দু বিন্দু বৃষ্টিকণা, ঝাপসা চতুর্দিক। কাঁটাবন মোড়ের কাছে যাত্রী ছাউনিটার নিচে দাঁড়িয়ে চশমার কাচ দুটো মুছে চশমাটা আবার চোখে তুলতেই অবাক। আরে বাপ্স! কে এ? কোনো মানুষ এত সুন্দর হয় নাকি! চেহারাতে শেষ বিকেলের ছায়ার মতো বিষাদ, চোখজোড়া অবিকল হালকা সবুজ জলের স্বচ্ছ পাহাড়ি নদী, ভেজা দিঘল কালো চুল যেন জলভারনত মেঘ আর তার সারা অঙ্গজুড়ে জড়ানো ঘন নীলাকাশ! বৃষ্টি বিকেলের অভাবনীয় নির্জনতায় আমাকে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখেও কোনো কুণ্ঠা নেই তার! বরং সহজভাবে হাসল আমার দিকে চেয়ে, এগিয়ে এল কাছে। বলল, ‘আচ্ছা, আপনি কি জানেন জয় গোস্বামী কোথায় আছেন?’
কবি জয় গোস্বামী এ শহরে এসেছেন জানি। কিন্তু কোথায় আছেন, সেটা ঠিক জানা নেই আমার। তাকে বললাম সে কথা। শুনে যেন সে নিজের মনেই বলতে লাগল, ‘জানেন, উনি না আমার জন্য এক পৃথিবী লিখবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।’
—‘আপনিই সেই মেঘবালিকা?’ প্রশ্ন করলাম বিস্মিত আমি।
সে হাসল আমার দিকে চেয়ে। আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘চলুন না, একটু খুঁজে দেখি তাঁকে পাওয়া যায় কি না।’
সানন্দে চলতে শুরু করলাম তার সঙ্গে। কবির সন্ধানে কাটতে লাগল আমাদের দিন। অনুসন্ধানের একদিন আজিজ সুপার মার্কেটে এক বইয়ের দোকানে দেখতে পেলাম পাতার পোশাক পরা কবিরূপ। মেঘবালিকা তখন আনমনে জল ছিটাচ্ছিল সামনের রাস্তায়। বাইরে বেরিয়ে এসে তার হাতে তুলে দিলাম বজ্রবিদ্যুৎভর্তি খাতা আর সূর্যপোড়া ছাই। সে অবাক হয়ে দেখল সেগুলো কিছুক্ষণ। তারপর হাসল আমার দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তির হাসি। আমি তার হাত ধরে বলতে চাইলাম, ‘পাগলি, তোমার সঙ্গে...।’
বলা হলো না। তার আগেই মিলিয়ে গেল মেঘবালিকা। রোদের তাপে শুকিয়ে গেল আমার চশমার কাচ। দেখলাম, সামনে আছে শুধু তারাই, যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল।