একটি ঘোড়া ও মমত্ববোধ

শাহবাগ থানার সামনে অসুস্থ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় এক ঘোড়া পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন এটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে এনে এখানে রেখে দেন। কিন্তু দায়িত্ব নিচ্ছিল না কেউ। মো. সালাম ও প্রাণিপ্রেমী তানজীয়া ইয়াসমীনের যত্নে এবং পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও বুরাক ঘোড়সওয়ারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহায়তায় ঘোড়াটি পেল চিকিৎসা, খাবার ও নতুন আশ্রয়। ঘোড়াটির নাম বাদশাহ। রেসকিউ মিশনে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মানবিক প্রচেষ্টার ফলে ঘোড়াটির জীবন নতুন করে ফিরে এসেছে।

১ / ১০
৩ অক্টোবর ২০২৫। শাহবাগ থানার সামনে একটি ক্লান্ত, অসুস্থ ঘোড়া পড়ে ছিল। অভিযোগ—ঘোড়াটি নাকি মানুষকে কামড়ায়। তাই কয়েকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঘোড়াটিকে ধরে এনে ফেলে রেখে যান থানার সামনে। ঘোড়াটির কোনো অভিভাবক ছিল না। তবে শাহবাগ থানার পক্ষ থেকেও ওসি প্রথম আলোকে জানান, ঘোড়াটির পুনর্বাসনের বিষয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ ও পশু-সেবা সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
২ / ১০
বেওয়ারিশ, অসুস্থ ঘোড়াটিকে কয়েক দিন ধরে সেবাশুশ্রূষা করে আসছিলেন মো. সালাম। তিনি থানার পাশের ফুটপাতে একটি অস্থায়ী ঘরে দীর্ঘদিন ধরে একাই বসবাস করছেন। শাহবাগ এলাকায় তাঁর পরিচয় ‘পতাকা সালাম’। তিনি জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই ঘোড়ার নাম ‘বাদশাহ’।
৩ / ১০
ঘোড়াটির খবর প্রথমবার সবার সামনে আসে চাকরিজীবী ও প্রাণিপ্রেমী তানজীয়া ইয়াসমীনের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। কয়েক দিন ধরেই ঘোড়াটির খোঁজ রাখছিলেন তিনি। সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবারের ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
৪ / ১০
এমন সময় এগিয়ে আসে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও বুরাক ঘোড়সওয়ারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাদের উদ্যোগে ঘোড়াটিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুপুরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঘোড়াটিকে একটি পিকআপে তোলা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে অনেক ব্যক্তি ও সংগঠন ঘোড়াটির চিকিৎসা ও খাবারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এগিয়ে আসেন।
৫ / ১০
আজ যখন ঘোড়াটিকে পুনর্বাসনের জন্য পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছিল, তখন আপনজনের মতো ঘোড়াটিকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন তানজীয়া ইয়াসমীন।
৬ / ১০
বিদায়ের সময় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি তানজীয়া।
৭ / ১০
শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া এক জীবের প্রতি ভালোবাসা ও মমতার নিঃশব্দ ভাষা যেন প্রকাশ পেল সেই মুহূর্তে—এক গভীর আলিঙ্গনে।
৮ / ১০
ভ্যানের ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মী। কেউ ঘোড়াটিকে হাত বুলিয়ে শান্ত করছেন, কেউ রশি ধরে নিরাপদে বাঁধছেন। চারপাশে ছড়িয়ে আছে কর্মব্যস্ততা, কিন্তু সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় ও স্পষ্ট—মানুষ আর এক অবলা প্রাণীর মধ্যে গড়ে ওঠা এক নীরব, অথচ গভীর সম্পর্ক।
DIPU MALAKAR
৯ / ১০
ঘোড়াটিকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা ফিসফিস করে সালাম বলছেন, ‘বাদশাহ, তুমি ভালো থেকো।’
১০ / ১০
থানার সামনের পথ ধরে ছোট পিকআপ ভ্যানটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ভ্যানে ‘বাদশাহ’কে ঘিরে সালামসহ কয়েকজন। আশপাশের মানুষেরা দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে তাদের।