২০২০ সালটা মনে রাখতে হবে করোনার বছর হিসেবে, বিষাক্ত এক বছর হিসেবে। কোভিড-১৯ মহামারিতে স্থগিত হয়েছে একের পর এক ক্রিকেট সিরিজ-টুর্নামেন্ট। মহামারির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আগে বছরের শুরুতে কিছুটা আর কঠিন সময়ের ধাক্কা সামলে বছরের শেষ দিকে ক্রিকেট তবুও মাঠে গড়িয়েছে। এ অল্প সময়েই মনে মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি জমেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ফেলা আসা টুকরো টুকরো ঘটনা ফিরে দেখা যেতে পারে ছবিতে ছবিতে:
বছরের শুরুটা অনেক বড় এক অর্জন দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আকবর আলীর নেতৃত্বে যুব বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আকবরদের হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জেতে কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। আর তাতেই সারা দেশে বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল।
জানুয়ারিতে প্রায় এক যুগ পর পাকিস্তান সফরে যায় বাংলাদেশ দল। সফরটি আলোচিত হয়ে আছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত নানা আলোচনায়। দুই ক্রিকেট বোর্ডের বারবার আলোচনার পর অতঃপর আলোর মুখ দেখে সফরটি। বাংলাদেশ দলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাই দিয়েছিল পাকিস্তান। সেটির প্রমাণ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের সামনে তোলা এই ছবি। দুজন পাকিস্তানি সেনা বাংলাদেশের পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে—ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে ডাইনোসরের মতো ভঙ্গি করে উদ্যাপন করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। উদ্যাপনের ব্যাখ্যায় মুশফিক নিজেই পরে বলেছিলেন উদ্যাপনটা ছিল তাঁর ছেলের জন্য। প্রাণহীন জীবজন্তু শাহরুজের খেলার সঙ্গী। সে বেশি পছন্দ করে ডাইনোসর। এ কারণেই তাঁর এই ডাইনোসর-উদ্যাপন। ছবি: শামসুল হক
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানটা এখন লিটন দাসের। গত ৬ মার্চে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ওপেনার করেছিলেন ১৭৬ রান। এ সিরিজেই গড়া সতীর্থ তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার পর লিটনের উদ্যাপন হলো এমনই।
লিটনের রেকর্ডের দিনে রেকর্ড হয়েছে আরও একটি। তামিম-লিটনের ওপেনিং জুটি ভেঙে দেন ২১ বছরের পুরোনো এক রেকর্ড। ওপেনিং জুটিতে এত দিন সর্বোচ্চ রান ছিল মেহরাব হোসেন-শাহরিয়ার হোসেনের—১৭০। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৯৯ সালের মার্চে গড়া এ রেকর্ডটিই ২১ বছর পর আরেক মার্চে একই দলের বিপক্ষে ভেঙে দেন তামিম-লিটন। দুজন গড়েন ২৯২ রানের জুটি। যেকোনো জুটিতেই এখন এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আরও একটি ঘটনায়। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা বিদায় জানালেন এই ম্যাচেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ককে সতীর্থরা বিদায় সংবর্ধনা দিলেন এভাবেই।
প্রায় ৭ মাস বিরতির পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেন অক্টোবরে, বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহ একাদশের উদ্যাপন হলো এমনই।
আহা মুক্তির আনন্দ! আইসিসির নিষেধজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব আল হাসান এক বছর পর ফিরলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। ৯ নভেম্বর যেদিন প্রিয় মাঠটায় ফিরলেন, সাকিব দুহাত ছড়িয়ে যেন বলতে চাইলেন, আমি এখন মুক্ত!
মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে আসার পর করোনার থাবা। বছরটা প্রায় বসেই কাটল মেয়েদের। ব্যতিক্রম শুধু সালমা খাতুন ও জাহানারা আলম। বাংলাদেশ নারী দলের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন আরব আমিরাতে মেয়েদের আইপিএল দিয়ে। লম্বা বিরতির পর ফিরে আইপিএলে দুর্দান্ত খেলেছেন সালমা। তাঁর দল ট্রায়ালব্লেজার্সকে শিরোপা জেতাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ফাইনালে ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট।
বছরটা শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে। পাঁচ দলের এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহর জেমকন খুলনা।