অনুসন্ধান কমিটিতে কারা কার নাম প্রস্তাব করেছে, প্রকাশের দাবি সুজনের

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটিতে কারা কার নাম প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরও কয়েকটি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। অনুসন্ধান কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে অভিজ্ঞ, সৎ, সাহসী ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে সুজন ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটিকে শুধু নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করলেই হবে না, কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, তাও জনগণের কাছে প্রতীয়মান হতে হবে। কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে, তাও জনগণকে জানানো জরুরি। কমিটি যা প্রকাশ করেছে, তাতে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়নি, কারণ কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রকাশ করলেও কারা প্রস্তাব করেছে, তা কমিটি প্রকাশ করেনি। অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে বা তথ্য গোপন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে অনুসন্ধান কমিটিকে তার কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে জানানো, কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে এবং তাঁদের অনুসন্ধান করে বের করবে, তাও জানানো। প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করা। এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া, তাঁদের সম্পর্কে শুনানি করা এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়া।

অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পরিপূর্ণ সতর্কতা ও যথাযথ বিবেচনাশক্তি কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিবেদনসহ ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের তিন দিন আগে প্রতিবেদনটিসহ চূড়ান্ত তালিকা জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা। অনুসন্ধান কমিটির কাজ শেষ হওয়ার পর কমিটির কাজের প্রসেডিংসহ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করা।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের পরিচয়, প্রস্তাবক ইত্যাদি জানাতে হবে, তাহলে স্বচ্ছতার পথে অগ্রগতি হয়েছে বলা যাবে। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থাটা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সে বিষয়ে কিছু হবে কি না সন্দেহ আছে, একটা ভালো নির্বাচন কমিশন অন্তত হোক।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ভালো নির্বাচনের প্রথম ধাপ হিসেবে ভালো নির্বাচন কমিশন যেন হয়। এখন পর্যন্ত কমিটি যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আগের তুলনায় ভালো, কিন্তু শুধু নাম প্রকাশ না করে কোন দল কার নাম দিয়েছে, সেটাও প্রকাশ করা উচিত। এতে নির্বাচন সম্পর্কে দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, যদি দেখা যায় কোনো দল তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনদের নাম দিয়েছে, তাহলে বোঝা যাবে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না, নিজেদের সুবিধামতো নির্বাচন করতে চায়। দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নাম দিয়েছে, নাকি নিজেদের সুবিধা হয়, এমন নাম দিয়েছে, তা বোঝাটা এখন খুবই জরুরি।

সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাাপক শাহনাজ হুদা, রোবায়েত ফেরদৌস, সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।