আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার ভব্যতা-সভ্যতার সীমা ছাড়িয়েছেন: বিএনপি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ‘অশালীন’ বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাঁরা চারবারের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তা ভব্যতা-সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধানের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাই এবং দুই কর্মকর্তাকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।’

২৬ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সেখানে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘তাঁরা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের অর্থনীতির ওপর অবরোধ আরোপ করতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা লবিস্ট নিয়োগ করছেন, জিএসপি বন্ধ করতে চিঠি লিখেছেন।’

আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম

ওই অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলার কড়া সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যাঁকে তাঁর স্বামী পরিত্যাগ করছিল…যে পাকিস্তানের ওখানে কী করছে…। আর এখন সে নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা।’

আরও পড়ুন

পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জাতির জীবনে বড় নির্মম পরিহাস যে আওয়ামী দলদাস প্রজাতন্ত্রের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এখন জাতিকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনাচ্ছে। পুলিশের অতি দলবাজ এই দুই কর্মকর্তা নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কৃপা পেতে যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন, তার মাশুল তাঁদের একদিন দিতেই হবে। বিশেষ করে এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে নোংরা ভাষায় কথা বলেছেন, তা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তো দূরের কথা, কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তানের পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন

‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না’—ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামের এমন বক্তব্যের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের-হাছান মাহমুদ সাহেবরা বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার-অপপ্রচার চালানোর পরও শফিকুল সাহেবের মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ পারছে না। তাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হলে পিস্তল-বন্দুক সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশের “লিপ সার্ভিস”ও দেওয়া উচিত।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, শফিকুল ইসলামের চাকরি ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর শেষ হয় এবং অবসরোত্তর ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হয়তো গুম, খুন, অপহরণে পারদর্শী হয়ে ওঠায় বিনা ভোটের সরকার তাঁকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সেই মেয়াদকালও শেষ হয়ে আসছে। আবারও চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগ লাভের আশায় শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি ভদ্রতার সব সীমা অতিক্রম করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিবেকবর্জিত বক্তব্য দিয়েছেন।

আইজিপির কথা উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজারবাগের ওই অনুষ্ঠানে বেনজীর আহমেদও বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তীব্র রোষ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাষায় আপামর গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধমক দিয়েছেন। তাচ্ছিল্যভরে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, আলেম-ওলামা এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর দফায় দফায় যে গণহত্যা এবং খুন, গুম, জুলুম, নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তাতে বেনজীর আহমেদের ভূমিকা কী ছিল, তা জনগণ ভালো করেই জানে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর জনগণ ভেবেছিল কিছুটা হলেও দেশে গুম-খুনের ভয়ের পরিবেশ কেটে যাবে। কিন্তু গত পরশু তাঁর বক্তব্যে বোঝা গেল, তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না।

আরও পড়ুন

রিজভী বলেন, একটি দেশে রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক শিষ্টাচার হারিয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দেশে এখন সেই অবস্থাই চলছে। দেশে কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার এতক্ষণে জেলে না হলেও চাকরি থেকে পত্রপাঠ বিদায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেরা এখন সাইডলাইনে, নিশিরাতের সরকার চলছে র‌্যাব-পুলিশের বন্দুকের ওপর ভর করে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।