আ.লীগের সঙ্গে আ.লীগের লড়াই

যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আবদুর রাকিব। গত বুধবার জেলা নির্বাচন কার্যালয় প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহ হাদীউজ্জামান। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় তাঁর মৃত্যু হলে পদটি শূন্য হয়। আগামী ১৬ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আট উপজেলার ১ হাজার ৩৩২ জন জনপ্রতিনিধি এতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ উপনির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান ও শরীফ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে কেন্দ্রে আবেদন করেন। কিন্তু দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র থেকে সাইফুজ্জামানের নাম ঘোষণা করা হয়। মনোনয়নবঞ্চিত হন শরীফ, যিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন। গত বুধবার জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে এ উপনির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিএনপি বা অন্য কোনো দল এ উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। স্বতন্ত্র হিসেবে একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে ভুল তথ্য দেওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে শরীফ আবদুর রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। কিন্তু ভোটারদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই প্রার্থী হয়েছি। দলের কোনো নেতা আমার সঙ্গে থাকল কি থাকল না, সেটি বড় বিষয় নয়। ভোটাররা আমাকে চাইছে কি না, সেটিই দেখার বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর বুধবার তিনি ঝিকরগাছা উপজেলায় গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে এসেছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর জনসংযোগ আরও জোরদার করবেন তিনি।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় শরীফ আবদুর রাকিব ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি তখন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী শাহেদ আহমেদের পক্ষে কাজ করেন। এ কারণে ২০০২ সালে শরীফকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর ঘোষণা দেন। সেই থেকে দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে আছেন শরীফ। এমন অবস্থায় তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন।
দলীয় সূত্র বলছে, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের দু-একজন গোপনে রাকিবকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ কারণেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি ভোটের মাঠে দাঁড়ানোর সাহস দেখাচ্ছেন। তবে কেবল জনপ্রতিনিধিরা এ নির্বাচনে ভোটার হওয়ায় দলীয় প্রার্থী সাইফুজ্জামান আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে রয়েছেন।
সাইফুজ্জামান নিজেকে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। জেতানোর দায়িত্ব দলের। আমি প্রতিদিনই ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা, হরিহরনগর, মষ্মিমনগর ও কাশিমনগর ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছি।’ শরীফ আবদুর রাকিবের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে আছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি দলীয় নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।