ইতিহাস বিকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করবে ‘ইতিহাস কথা কয়’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটি তাঁবেদার, জনবিচ্ছিন্ন, পুতুল সরকার। তারা মিথ্যা দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার বহুমুখী প্রচার চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিএনপি ‘ইতিহাস কথা কয়’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক শিরোনামে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সত্য কথাটা উঠে আসুক, এ জন্য আজকে আমরা ‘ইতিহাস কথা কয়’ বলে এই অনুষ্ঠান করছি। যত দিন বিকৃতির তৎপরতা চলবে তত দিনই এই লড়াই চলবে। যখন ইতিহাসের ঘটনাকে তারা দলীয় বয়ানে প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত হবে, তখনই ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবে ‘ইতিহাস কথা কয়’।

মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যা কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, তিনি পরে যখন দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি চির ভাস্কর হয়ে আছেন।

পঁচাত্তরের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যা মামলার রায়কেও অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কারণ, সুদীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষী-সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে ক্ষমতাসীনেরাই বিচারকার্য সম্পন্ন করেছে। এখন নতুন করে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ চ্যাপটার’কে পুনরায় বিতর্কের বিষয় হিসেবে তুলে এনে আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপীর পরিচয় দিচ্ছেন।

প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ ভয় পায়
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। তিনি ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের মৌলিক প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন, দেশকে স্বনির্ভর করা, দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়া, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য দেশকে প্রস্তুত করা—এসব কারা করেছে? সবগুলোতেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সফলতা। সে জন্যই তারা সত্য ইতিহাসকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য, এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইতিহাসকে বিকৃতি করছে।

আফগানিস্তান থেকে শিক্ষা নিতে হবে
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা তো একজন রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকেই আমরা আশা করেছিলাম। তিনি বা তারা দিতে পারেনি, দিয়েছেন এক অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমান। আমরা যেটা পারিনি, তুমি পারতে গেলে কেন? এই হীনম্মন্যতা থেকে তারা ইতিহাস বিকৃত করছে ১৯৭২ সাল থেকেই।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, এই যে লাখো মানুষ জীবন দিল, একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন পণ করে বিজয় ছিনিয়ে নিল, এই কৃতিত্ব কাউকে দিতে চায় না তারা।

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘আমি বলব, এখনো সময় আছে শিক্ষা নেওয়ার। আফগানিস্তানে কী হয়েছে—এটা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেককে কিন্তু হেলিকপ্টারের ডানা ধরে ঝুলতে হবে। আফগানিস্তান থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারছি যে জনগণের জয় একদিন না একদিন হবেই। দেশের অধিকাংশ জনগণ যাকে সমর্থন করবে, যে দল বা যে আদর্শকে সমর্থন করবে, এটিকে কোনো দিন দাবিয়ে রাখা যায় না। যার জন্য পৃথিবী সবচেয়ে সর্বশক্তিমান পরাশক্তিকেও আফগানিস্তান থেকে যেতে হয়েছে।’

‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রমুখ।