একটি অদৃশ্য শক্তি দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়: মির্জা ফখরুল

অলি আহাদ স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৪ অক্টোবর
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

দেশকে সংকট থেকে বের নিয়ে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব দল–মতের মানুষকে এক হতে বললেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে রাজনীতিবিদ অলি আহাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, একটি অদৃশ্য শক্তি এখন দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ধর্ম থেকে শুরু করে বিভাজন এত বেশি যে মানুষ আওয়ামী লীগকে এখন বিচ্ছিন্নভাবে দেখছে।

প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অলি আহাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলন ও এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অলি আহাদের অবদানকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে ইতিহাসে স্থান দিতে হবে। এ দেশ প্রতিষ্ঠায় অনেকের অবদান রয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, বাংলাদেশকে এখন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান শাসন ভারত দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

আলোচনা সভায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখন ভয়ংকর অবস্থা চলছে। মানুষকে হত্যা, নির্যাতন করতে সময় লাগে না। ১৪ বছর ধরে বিএনপির ৫০০ নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা হাল ছেড়ে না দিয়ে লড়ছি। ২০১৮ সালে বাম দলসহ সবার সঙ্গে ঐক্য করার চেষ্টা করেছি। এখনো সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছি। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে সবাইকে একত্রে নিয়ে আসতে চাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছিল, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে সবাইকে এক হতে হবে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে, তারেক রহমানকে নির্বাসিত রাখা হয়েছে। তিনি অলি আহাদকে স্মরণ করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনার জন্য যে কজন মহান ব্যক্তি, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ সারা জীবন অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অলি আহাদ একজন।

মাহবুব উল্লাহ বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামের আগে যেভাবে জনসভা করা হতো, সেটা করাও এখন কঠিন হয়ে গেছে। গণতন্ত্র এখন পেছনের দিকে হাঁটছে।

দিলারা চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকের ধারণা, ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হয়েছে। এটা ভুল। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়েছে আরও আগে থেকে। সেখানে প্রথম সারির একজন নেতা ছিলেন অলি আহাদ।

দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পবিত্র কোরআন পূজামণ্ডপে রেখে অবমাননার ঘটনায় ইকবাল নামের এক ব্যক্তিকে হাজির করা হয়েছে। যাঁর কথাবার্তাই উল্টাপাল্টা। একটি ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করা হয়েছে, যেটা আর কেউ দেখেননি। মানুষকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করার এমন রাজনীতি আগে আর দেখা যায়নি। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে গণতন্ত্র হত্যা শুরু করে।

জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শাসন এখন ভারত দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া সব ধর্মের নাগরিকের বাংলাদেশ তৈরি করা যাবে না। সরকার আগুন নিয়ে খেলছে। কোরআন শরিফ অবমাননা করে মানুষকে উত্তেজিত করার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাত বছরে ৩ হাজার ৭৮৯টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। এটাকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। সরকারি দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দেওয়ার প্রমাণ এখন বেরিয়ে আসছে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বিএনপির সাংসদ এবং অলি আহাদ স্মৃতি সংসদের সদস্যসচিব অলি আহাদের মেয়ে সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, তাঁর বাবা এ দেশ প্রতিষ্ঠায় পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন না। ইতিহাসের যে জায়গায় তাঁর নাম থাকা উচিত, সেখানেই যেন তাঁর নাম থাকে। ইতিহাস যেন সংবিধানের অংশ না হয়ে ইতিহাসবিদদের হাতেই থাকে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকে এখন ভুল মানুষের হাতে তুলে দিয়ে আমরা কলুষিত করছি।’

আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহেদ উর রহমান।

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি মানববন্ধন করেছে।