এত দিন লম্বা লেকচার মারলেন, এখন কেন লবিস্ট নিয়োগ: ফখরুল
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘এত লেকচার মেরে’ এখন সরকার কেন লবিস্ট নিয়োগ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, কারণ একটাই, জনগণের টাকায়, ট্যাক্সে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগণের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন, গুম করা, খুন করাকে হালাল করতে চাইছেন।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে’ এক বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, ওই যে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এইটাকে দূর করার জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। মাসে ২০ হাজার ডলার দেবেন তাদের। এত দিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন, এখন কেন লবিস্ট নিয়োগ করছেন, কারণটা কী।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। চতুর্দিক থেকে ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আর উপায় নেই। যতই ওলটপালট করেন, লবিস্ট নিয়োগ করেন, কোনো লাভ হবে না।
শনিবার বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর ১২টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে সমবেত হন। তাঁরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভর্তুকি দেওয়া আর যাবে না। চুরি বন্ধ করেন, লুট বন্ধ করেন, ভর্তুকি দিতে হবে না। চুরি করছেন, লুট করছেন বলেই তো আজকে ভর্তুকি দিতে হয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখছি প্রতিদিন ন্যায্যমূল্যের টিসিবির লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। এখন সেই লাইনে মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন। গ্যাসের দাম প্রতিবছরে দুইবার–তিনবার করে বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম দুইবার, তিনবার, চারবার করে বাড়ানো হচ্ছে। পানির দাম বারবার বাড়ানো হচ্ছে। একটাই কারণ, এই সরকার প্রশাসনকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।
পানির দাম বাড়ার কারণ কী?—এ প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ওয়াসার যে এমডি, তাঁকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বেতন কত জানেন? কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এই যে অপচয়, এই যে ব্যক্তিবিশেষকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া, এ কাজটা করছে সরকার। আজকে দুর্নীতিকে একটা সর্বগ্রাসী ব্যাধিতে পরিণত করেছে এই সরকার।
এ সময় চালের দাম বৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, প্রথমত উৎপাদনে ঘাটতি আছে। যদিও সরকার তা স্বীকার করতে চায় না। তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) বলে, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ প্রতিবছর তাদের (সরকারকে) ৫৭ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। এভাবে মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে সর্বক্ষণ।’
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিদ্যুতে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে অথবা বিদ্যুতের দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করতে এত বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করেছে যে সেখানে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকছে না।
চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে ৩৬৫ কোটি টাকার দুর্নীতি, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা নিয়ে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
সরকারের প্রস্তাবিত ‘গণ পেনশন’ কর্মসূচিকেও লুটপাটের কৌশল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকি গণ পেনশন দেবে, মানুষকে পেনশন দেবে। কিন্তু পরিষ্কার করে কিছু বলছে না।
কিন্তু আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি, আরেকটা লুটের কায়দাকানুন তারা করতে যাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। বরং মানুষকে বিপদে ফেলছে। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের একটাই সমস্যা, তা হলো আওয়ামী লীগ। মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে শত্রু মনে করতে শুরু করেছে। তারা গালি দেয়, এই তুই মানুষ না আওয়ামী লীগ। ভুল বললাম? এটাই মানুষ বলে সব জায়গায়। আমরা টেরই পাই, যখন গ্রামে যাই। আজকে সমগ্র দেশে একটাই আওয়াজ, হাসিনা তুমি বিদায় হও, এই জনগণকে মুক্তি দাও।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।