‘কচি রক্তে আগুন ধরেছে, মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই’

সশস্ত্র বাহিনী ‘বাঙালির বীরত্বের চিত্রগাঁথা’ নামে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
ছবি: পিআইডি

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে অতীতের বীরত্বগাথা স্মরণ করতে হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে স্বাধীনতাযুদ্ধের ধারণকৃত দুর্লভ চিত্রের তিন দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সশস্ত্র বাহিনী ‘বাঙালির বীরত্বের চিত্রগাঁথা’ নামে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

প্রদর্শনী এবং এ উপলক্ষে অ্যালবাম প্রকাশের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের আলোকচিত্র খুব বেশি নেই এবং যদি সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলে সেগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। এগুলোকে সন্নিবেশিত করে একটি অ্যালবাম বের করে এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

বাঙালির ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, পাঁচ হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে। এর আগে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।

স্বাধীনতাযুদ্ধের দুর্লভ চিত্রের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পিএসও লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
ছবি: পিআইডি

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শৈশবে আমি মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকা দেখেছি। দেখেছি আমার বসতবাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে, আমার গাঁয়ে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আমার কচি রক্তে আগুন ধরেছে, আমারও মনে হয়েছে আমি মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই। কিন্তু বয়স আমার প্রতিবন্ধক ছিল। আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি।

কিন্তু আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা, সাধারণ জনগণ এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিজের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যুদ্ধ করেছে। একটি প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের জনযুদ্ধে আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবার সম্মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ রচিত হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমরা গর্বিত জাতি। আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যে রাষ্ট্রে থাকবে মানবিকতা, সাম্য, অপরের প্রতি মমত্ববোধ, ২০৪১ সাল নাগাদ যে রাষ্ট্র জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায় একই সঙ্গে মানবিকতায় উন্নত হবে যেন আমাদের কাছ থেকে পৃথিবী পথ দেখে।’

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।