ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে দুদকে চিঠি বিএনপির

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। চেয়ারপারসনের কার্যালয়, গুলশান, ১১ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আজ সোমবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে। আপনারা এখন সাহস করে অনেক কিছু লিখছেন, যার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি। আমরা দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছি। সরকারের এক উপদেষ্টা (সালমান এফ রহমান) ও আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) টেলিফোন আলাপ (কনভারসেশন) আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেই কনভারসেশনে যে বিষয়গুলো ছিল, সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এর তদন্ত হয়েছে কি না, তা–ও জানতে চেয়েছিলাম।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ফরিদপুরের একটি পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। আর কোনো কথাই হচ্ছে না এগুলো নিয়ে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা দুর্নীতির এই বিষয়গুলো নিয়ে আপাতত দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেব। সেই চিঠিতে তাদের আমরা তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করব। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতিটা ইস্যু যেটা আসবে, সেটা আমরা জাতির কাছে তুলে ধরব এবং একই সঙ্গে দুদকে পাঠাব।’

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু দুদকে যান চিঠি নিয়ে
ছবি: প্রথম আলো

দলের এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আজ দুপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর টেলিফোন কনভারসেশনের বিষয়বস্তু’ ও ‘ফরিদপুরে দুই হাজার কোটি টাকার পাচারের বিষয়ে’ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি নিয়ে যাবেন বলে জানান মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, দুদকের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা আমরা দুর্নীতির যে বিষয়গুলো দিচ্ছি, সেগুলোর ওপর সুষ্ঠু তদন্ত করে তা জাতির সামনে তুলে ধরবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ যে ব্যবস্থা আছে, তা গ্রহণ করবে।’

‘দুর্নীতির বিষয় দুদক আমলে নিচ্ছে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুদক অত্যন্ত সেনসেটিভ ইস্যুগুলো নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনে যাঁরা একটু কাজ করতে চান, তাঁদের স্টাফ, অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাঁদের বিরুদ্ধে দুদকই ব্যবস্থা নেয়। কিছুদিন আগে একজন কর্মকর্তা শরীফ সাহেবকে বদলি করা হয়েছে এবং পদাবনতি করা হয়েছে একটি বিশেষ দুর্নীতির মামলা তদন্ত করার কারণে। আজকের পত্রিকায় আছে, দুর্নীতি দমন কমিশন নিজেরাই দুর্নীতির যেসব বিষয় আসছে, সেগুলোর তদন্ত করে যে রিপোর্টগুলো আসছে, সেগুলো তারা আমলে নিচ্ছে না। আর সেগুলোকে তারা ধামাচাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, দুদকের বেশির ভাগ সরকারি আমলাকে নিয়োগ দেওয়া হয় অথবা সাবেক আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করেন যে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যাঁরা আছেন, তাঁরা অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা যাঁরা আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত যাতে না হয়। বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় ব্যাধি। এটা এখন ক্যান্সার আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কোথায় পাবেন না যে ঘুষ দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ হয়। কথা শুনবে না, আইন-আদালতে বিচার পাবে না। এর কারণটা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতিকে আজকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।

দুর্নীতির ওপর শ্বেতপত্র এখন নয়

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের শ্বেতপত্র প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা এখন দরকার নেই। তবে সেটা (শ্বেতপত্র) সক্রিয় আলোচনার মধ্যে আছে, বিবেচনার মধ্যে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম দুদকের উদ্দেশে গুলশানের কার্যালয় থেকে রওনা দেন। দুপুরের পর তাঁরা দুদকে যান।