খালেদাকে বিদেশে যেতে না দিলে ‘গদিচ্যুতির’ আন্দোলন

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে সারা দেশে গণ–অনশন কর্মসূচি। চার জেলায় লাঠিপেটা ও হামলা। কাল সমাবেশ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিদেশে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলছেন, খালেদা জিয়ার যেসব জটিলতা আছে, সেই জটিলতাগুলো বিদেশে আরও অ্যাডভান্স সেন্টারে ট্রিটমেন্ট দেওয়া না হলে তাঁকে সুস্থ করা যাবে না।’
খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে ‘গদিচ্যুত’ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির গণ–অনশন কর্মসূচি থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ হুঁশিয়ারি জানান। একই সঙ্গে কাল সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং সারা দেশে মহানগর-জেলা-উপজেলায় সমাবেশ হবে। এরপরও দাবি না মানলে রাজপথেই এর সমাধান হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন দলটির নেতারা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ঢাকাসহ বেশির ভাগ জায়গায় কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও খুলনা, বরগুনা ও ফরিদপুরে অনশনে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পটুয়াখালীতে অনশনে হামলা করছে ছাত্রলীগ। এতে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ বরগুনার অনশন থেকে বিএনপির ছয়জন নেতা–কর্মীকে আটক করেছে বলে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা আবেদন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হয় ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে বিএনপি, জোটের শরিক দলের নেতা এবং শিক্ষক, সাংবাদিকসহ মোট ৬৫ জন বক্তব্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী মির্জা ফখরুলকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

সকাল আটটার দিকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের এক পাশজুড়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক ত্রিপল, মাদুর ও খবরের কাগজ বিছিয়ে অনশনে অংশ নেন। তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। কর্মসূচি ঘিরে সাঁজোয়া যান, জলকামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ওই এলাকায় অবস্থান নেন।

অনশন কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, ‘এ গণ–অনশন থেকে সরকারকে খুব পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এবার যে আন্দোলন শুরু হলো গণ–অনশনের মধ্য দিয়ে, সেই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিদেশে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলছেন, খালেদা জিয়ার যেসব জটিলতা আছে, সেই জটিলতাগুলো বিদেশে আরও অ্যাডভান্স সেন্টারে ট্রিটমেন্ট দেওয়া না হলে তাঁকে সুস্থ করা যাবে না।’

বিএনপির মহাসচিব সংসদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। সে জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই প্রমাণিত হয়, একমাত্র তাঁর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, তাঁর ইচ্ছাতেই বেগম জিয়ার সাজা হয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সফল না হব, ততক্ষণ আমাদের চলার গতি থামবে না। মাঠই বলে দেবে কখন কী করতে হবে।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা একটা মগের মুল্লুকে আছি। ফাঁসির আসামিকে জেলগেটে বিয়ে দিয়েছেন আর খালেদা জিয়া জামিন পান না।’ তিনি বলেন, ‘আমি কি সরকারের কাছে জানতে পারি, সংবিধানের কোথায় আছে রাজনৈতিক বন্দীকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো যাবে না?’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপিকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ সরকারের কাছে দাবি পেশ করে কোনো লাভ হবে না। গলায় গামছা দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে দিলে বাংলাদেশের রাজনীতি একদিকে যাবে; না দিলে রাজনীতি যেদিকে যাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর পরিচালনায় গণ–অনশনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমানউল্লাহ, আবদুস সালাম, জহির উদ্দিন, আইনজীবী নেতা জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন ও রুহুল কুদ্দুস ওরফে কাজল, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, এম আবদুল্লাহ ও ইলিয়াস খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম প্রমুখ।