খালেদা জিয়াকে রক্ত দিতে হচ্ছে

সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের কাছে গতকাল বুধবার স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। আজ থেকে নতুন করে আট দিনের কর্মসূচি শুরু।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। লিভারের জটিলতায় তাঁকে রক্ত দিতে হচ্ছে। গতকাল বুধবারও রক্ত দিতে হয়েছে বলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিয়ে গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবিতে গতকাল সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। একই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আট দিনের নতুন কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠন।

গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে যুবদলের বিক্ষোভ ও আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠান। এরপর ২৮ নভেম্বর সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ (ঢাকায় হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে), ৩০ নভেম্বর বিভাগীয় সদরে বিএনপির সমাবেশ, ১ ডিসেম্বর সারা দেশে ছাত্রদলের সমাবেশ, ২ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা দলের মানববন্ধন, ৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে কৃষক দলের সমাবেশ এবং ৪ ডিসেম্বর মহিলা দলের মৌন মিছিল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব কর্মসূচি পুরোপুরি নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। প্রয়োজনে কর্মসূচি পরিবর্তন হতে পারে।

বিএনপির মহাসচিব জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। এর পর তা দলের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক, ঢাকা মহানগরীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত হয়।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে গতকাল যৌথ সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এসব কর্মসূচি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি। সমাজে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে সব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কর্মসূচি দিতে হয়। কোনো হঠকারিতামূলক কর্মসূচি আমরা দিতে চাই না।’

গুজব, তবে সংকটাপন্ন

মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ায়। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ গুজবগুলোর কোনো ভিত্তি নাই। আজকে এখনো কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। আমার মনে হয়, অত্যন্ত কৌশলে কোনো মহল এই গুজবগুলো ছড়াচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্যে।’ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বিষয়ে আপনারা সরাসরি আমাকে ফোন করবেন, আমি আপনাদের জানাব।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা কেমন, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো তিনি ওই অবস্থাতেই আছেন। স্টিল ইজ ভেরি ক্রিটিক্যাল। ডাক্তার সাহেবেরা মনিটর করছেন, তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের পক্ষে যেটা সম্ভব, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তাঁরা করছেন।’

অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন নেতা গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যান। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী অতি দ্রুত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন বাঁচবেন, সেটা বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি, খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন। তাঁকে হত্যা করা হচ্ছে। এই হত্যার জন্য আইনমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও হুকুমের আসামি হবেন।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন চিকিৎসক আমাকে বিস্তারিত বলেছেন। আমি তাঁদের ফাইলের প্রত্যেকটা লেখা পড়ে দেখেছি। আমি কারও মুখের কথায় কিছু বলছি না। তাঁর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তচাপ কমে গেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) গিয়ে দেখেছি তাঁকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে।’

আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বলেন, ‘আর কোনো বাড়াবাড়ি কইরেন না। একজন মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনটা রক্ষা করেন। এখন আর কোনো ভানুমতীর খেলা দেখাইয়েন না। অনুগ্রহ করে আজকেই বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন।’

২৫৮২ সাংবাদিকের বিবৃতি

খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে গতকাল ২ হাজার ৫৮২ জন সাংবাদিক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এক যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিকেরা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে তাঁর অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের এক শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে, উপরন্তু একজন কারাবন্দীর যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ।’

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে সই করেন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, আমানউল্লাহ, আবুল আসাদ, শওকত মাহমুদ, রেজোয়ান সিদ্দিকী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, আবদুল হাই শিকদার, এরশাদ মজুমদার, আল মুজাহিদি, এম আবদুল্লাহ, এম এ আজিজ, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, মাসুমুর রহমান খলিলী, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী, মুরসালিন নোমানী, এ কে এম মহসিন প্রমুখ।

৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ১৩ নভেম্বর থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।