জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে হামলায় অর্ধশত আহত

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশালের গৌরনদীতে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলায় আহত (বাঁ থেকে) মনির হোসেন, জামাল শরীফ ও মাহাতাব সরদার
ছবি: সংগৃহীত

জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নির্বাচনী এলাকায় (ঢাকা-৩) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বিএনপির উদ্যোগে সোমবার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী অসহায়-দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু রোববার রাত নয়টার দিকে জিনজিরায় দলীয় কার্যালয়ে প্যাকেট করার সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন সাকুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে কার্যালয়ে হামলা করেন। এই হামলায় ৩০ জনের অধিক নেতা–কর্মী গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির জন্য তৈরি করা মঞ্চ ভাঙচুর করেন এবং ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার ছিড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা।’

রিজভী জানান, হামলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রুহুল আমিন, জহিরুল ইসলাম মামুন, কাউছার, যুবদলের রাশেদুল ইসলাম ইমন, মো. আলী, ছাত্রদলের সাফিন আহমেদ, তাঁতী দলের আল-আমিন সুজন, ইমরান, অফিস সহকারী এরশাদসহ ৩০ জনের অধিক নেতা–কর্মী আহত হন।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে পুরান ঢাকার নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে বংশাল থানার পুলিশ অতর্কিত হামলা, কার্যালয়ে তালা লাগানোসহ চারজন নেতা–কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ ছাড়া খাগড়াছড়ির তবলছড়ি গ্রিন হিল কলেজে ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের ওপর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ন ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। হামলায় ছাত্রদলের ফারুক, নাজমুল এলাহী, সালাম ও আরিফ আহত হন। এর আগে রোববার বিকেলে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়া নেতা–কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। হামলায় স্থানীয় বিএনপি নেতা নুরুল আলম নুরু, নারায়ণ ত্রিপুরা, দেবাশীষ দত্ত আশিষ, জেলা ছাত্রদলের আলাউদ্দিন চৌধুরী, ওমর ফারুক, পৌর ছাত্রদলের আবদুর রহমান রানাসহ ২৮ জন নেতা–কর্মী আহত হন বলে জানিয়েছেন রিজভী।

বরিশাল উত্তর জেলার গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কর্মসূচিতেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। আহত ব্যক্তিরা হলেন যুবদলের মনির হাওলাদার ও গোলাম মাহতাব। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি চলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের মানিক মিয়া ও ফজলু তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে। রিজভী জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন ছাত্রদলের মারুফ মিয়া, মাহমুদুর রহমান জাপ্পি, রতন মাহফুজ ফয়সাল, আবদুস সালাম রিপন, আশরাফুল ইসলাম সোহাগ ও সুয়েব মিয়া।

বগুড়াতেও বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, রোববার বগুড়ার ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলা এবং গুলিবর্ষণ করা হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় গাবতলী বিএনপি অফিসে। হামলায় গাবতলী থানা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেসাসেবক দল ও শ্রমিক দলের নেতা–কর্মীরা আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। থানা ছাত্রদলের সভাপতি এম আর হাসান পলাশ, গাবতলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান হিরু, থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাঙ্গা, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লুকু, দুগাহাটা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিক হাসানসহ আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ এবং পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ হারুন, পৌর ছাত্রদল নেতা আলামিন, যুবদল নেতা সেলিম, আলিম, সিপন, শ্রমিক দল নেতা জুয়েল আহমেদসহ বহু নেতা–কর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়। এ ছাড়া পৌর যুবদল নেতা রনির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

এ সময় এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী।