তাঁরাও ছুটছেন নির্বাচনের মাঠে

  • প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলমের বাইরে প্রার্থী আছেন আরও পাঁচজন।

  • প্রধান দুই প্রার্থীর বাইরে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. মাছুম বিল্লাহ্।

নারায়ণগঞ্জ নগরের মূল সড়ক থেকে অলিগলি—সব জায়গায় ঝুলছে নির্বাচনী পোস্টার। এর মধ্যে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতীকের পোস্টার বেশি। পাশাপাশি চোখে পড়ছে অন্য প্রার্থীদের পোস্টারও। পরিবর্তনের আশায় তাঁরাও ছুটছেন গণসংযোগে।

মূল দুজনের চেয়ে কম আলোচনায় থাকা মেয়র পদপ্রার্থীরা বলছেন, রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এ দুই দলের প্রার্থী নিয়েই আলোচনা বেশি হয়। তবে তাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের মনোভাব দেখতে পাচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের আশাও দেখছেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন গত দুবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর হাতি নিয়ে মাঠে আছে বিএনপির পদ হারানো নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। এই দুজনের বাইরে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আছেন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মো. মাছুম বিল্লাহ্। গত এক দশকে দলটি সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় এসেছে।

প্রধান দুই প্রার্থী ছাড়া অন্য মেয়র পদপ্রার্থীদের পোস্টারও চোখে পড়ছে। একজন ছাড়া অন্যরা নিয়মিত জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

দুটি সংসদীয় এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। এ দুটি আসনেই ২০১৮ সালে প্রার্থী দিয়েছিল হাতপাখা। দুই আসন মিলে তারা ভোট পেয়েছিল ৩০ হাজার। এর আগে ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে হাতপাখা পেয়েছিল ১৪ হাজার ভোট। ওই সময়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মো. মাছুম বিল্লাহ্ এবারও হাতপাখার প্রার্থী। তাঁর প্রচারে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে এসে সভা করেছেন দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। নির্বাচনী প্রচারের জন্য একটি মূল কার্যালয় ছাড়াও শহরে তিনটি প্রচার ক্যাম্প করেছে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, দিন দিন হাতপাখার ভোট বাড়ছে।

মো. মাছুম বিল্লাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু আছে। হাতপাখার প্রচারে মানুষ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ভোট জালিয়াতি যাতে না হয়, এর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে হাতপাখার কর্মীরা থাকবে।

গত বুধবার শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পথসভা শেষে কথা হয় খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুনের সঙ্গে। প্রতিদিন তিনটি করে ওয়ার্ডে গণসংযোগ করছেন তিনি। একটি নির্বাচনী প্রচার কার্যালয় থেকে চলছে তাঁর প্রচারকাজের সমন্বয়। তাঁর দল প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। ২০০৯ সালে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে ১৯ হাজার ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই দলের প্রার্থী। সিরাজুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের নির্বাচন পরিস্থিতি বিবেচনায় শঙ্কা থাকলেও এখানে ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু আছে। দেয়ালঘড়ি প্রতীকে মানুষ ভালো সাড়া দিচ্ছে। ২৭ ওয়ার্ডের জন্য আলাদা করে এজেন্ট তালিকা করা হচ্ছে। ভালো ফল করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী হয়েছিলেন জসীম উদ্দিন। ওই নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তাঁর। এবার প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জসীম উদ্দিন। এর আগের সিটি নির্বাচনে তাঁর দল প্রার্থী দেয়নি। প্রচারকাজ চালানোর জন্য একটি নির্বাচনী কার্যালয় করেছেন তিনি। ঘুরে ঘুরে তাঁর প্রতীক বটগাছের প্রচারপত্র বিতরণ করছেন তিনি ও তাঁর কর্মীরা। জয়ের বিষয়ে আশাবাদ জানিয়ে প্রথম আলোকে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে কত ভোট পেয়েছিলাম, সেটি এখন মনে নেই। এবার জনগণ সিটি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে।’

গত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস। এবার হাতঘড়ি নিয়ে তিনি আছেন ভোটের প্রচারে। একটি নির্বাচনী প্রচার কার্যালয় থেকে তাঁর প্রচার চলছে। প্রথম আলোকে রাশেদ ফেরদৌস বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নগরে নানা অব্যবস্থাপনা দেখে আসছেন নগরবাসী। এসব সমস্যা সমাধানে মেয়র কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। তাই নগরবাসী পরিবর্তন চান।

সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন প্রতিদিন গণসংযোগ করলেও এখনো মাঠে দেখা যায়নি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের কামরুল ইসলামকে। একাধিকবার ফোন করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।